Home শীর্ষ খবর ডাক্তার থেকে যেভাবে আল কায়েদার নেতা হয়েছেন জাওয়াহিরি

ডাক্তার থেকে যেভাবে আল কায়েদার নেতা হয়েছেন জাওয়াহিরি

দখিনের সময় ডেস্ক:

মিশরের রাজধানী কায়রোর একটি সম্ভ্রান্ত মধ্যবিত্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম আয়মান আল-জাওয়াহিরির, ১৯৫১ সালের ১৯ জুন । তাদের ছিল চিকিৎসক এবং শিক্ষাবিদের পরিবার। তার দাদা রাবিয়া আল-জাওয়াহিরি ছিলেন কায়রোর আল-আজহারের গ্র্যান্ড ইমাম, যেটি মধ্যপ্রাচ্যের সুন্নি ইসলামিক শিক্ষার কেন্দ্র। তার একজন চাচা ছিলেন আরব লিগের প্রথম মহাসচিব।

কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিসিন অনুষদে ১৯৭০ সালে পড়াশোনা করতেন জাওয়াহিরি। ১৯৭৪ সালে কায়রো ইউনিভার্সিটি মেডিক্যাল স্কুল থেকে স্নাতক এবং এর চার বছর পরে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।

বিশ্বে আল কায়েদার নেতা হিসেবে পরিচিত জাওয়াহিরি। একজন অনমনীয় ও লড়াকু ব্যক্তিত্ব হিসেবে খ্যাতি থাকা সত্ত্বেও তিনি বিশ্বজুড়ে আল কায়েদাকে শক্তভাবে পরিচালনা করতে পারেননি। তবে তিনি হালও ছাড়েননি। তার নেতৃত্বে আরব বসন্ত থেকে এশিয়া, আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে বেশ কয়েকটি দেশে অস্থিতিশীল কিছু কর্মকাণ্ড চালিয়েছে আল কয়েদা।

জাওয়াহিরির উত্থান কয়েক দশক আগে। জাওয়াহিরি ছিলেন একজন প্রশিক্ষিত সার্জন। তিন বছর কারাভোগ করার পর মুক্তি পেয়ে তিনি মিসর থেকে পাকিস্তানে চলে যান। সেখানে তিনি সোভিয়েত (তৎকালীন) বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধরত আফগানিস্তানে আহত ইসলামি মুজাহিদীন গেরিলাদের চিকিৎসার জন্য রেড ক্রিসেন্টের সঙ্গে কাজ করতে শুরু করেন। ওই সময়েই বিন লাদেনের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। সৌদি ধনকুবের ও আল কায়েদার শীর্ষ নেতা ওসামা বিন লাদেন তখন আফগানিস্তানে যুদ্ধ করছিলেন।

এর পর ১৯৯৩ সালে মিসরে ইসলামি জিহাদের নেতৃত্ব নিজ কাঁধে তুলে নেন আয়মান আল জাওয়াহিরি। তিনি মিসরের তৎকালীন সরকারকে উৎখাত করে বিশুদ্ধ ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য নানা তৎপরতা শুরু করেন। ১৯৯৫ সালের জুনে আদ্দিস আবাবায় তার নেতৃত্বে মিসরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারককে হত্যাচেষ্টা হয়। সেখানে জঙ্গিদের হামলায় ১৬ জন নিহত হয়েছিল। ১৯৯৯ সালে মিসরের আদালত জাওয়াহিরির অনুপস্থিতিতে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। ততদিনে তিনি আল কায়েদার গুরুত্বপূর্ণ নেতা হয়ে উঠেছিলেন। তারপর থেকেই জাওয়াহিরিকে খোঁজা হচ্ছিল। ধারণা করা হচ্ছিল, তিনি আফগানিস্তানের দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে লুকিয়ে আছেন।

চলতি বছরে মার্কিন কর্মকর্তারা নিশ্চিত হয়েছেন, জাওয়াহিরি স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে কাবুলের একটি বাড়িতে স্থানান্তরিত হয়েছেন। মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, স্থানীয় সময় রোববার তিনি তার বাড়ির বারান্দায় বের হলে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর ছোড়া ড্রোন হামলায় তিনি নিহত হন।  অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ২০০১ সালে আমেরিকায় হামলার মূল বাস্তবায়নকারী ছিলেন আল-জাওয়াহিরি। সে হামলার পরে আমেরিকা যে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকা প্রকাশ করেছিল সেখানে ওসামা বিন লাদেনের পরেই জাওয়াহিরির নাম ছিল। তার মাথার মূল্য ঘোষণা করা হয়েছিল আড়াই কোটি ডলার।

স্কুলে পড়ার সময়ে আল-জাওয়াহিরি রাজনৈতিক ইসলামের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। মাত্র ১৫ বছর বয়সেই তিনি আল কায়েদার দিকে ঝুঁকে পড়েছিলেন।  জাওয়াহিরি মিসরীয় লেখক সাইয়্যিদ কুতুবের বিপ্লবী চিন্তাধারা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। সাইয়্যিদ কুতুব ছিলেন একজন চরমপন্থি ইসলামি নেতা। ১৯৬৬ সালে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

পরীমণি প্রথম স্বামীর পরদিন মারাগেলো প্রথম পরিচালক

দখিনের সময় ডেস্ক: লাইফ সাপোর্টে থেকেই না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন ঢাকাই সিনেমার আলোচিত নায়িকা পরীমণির প্রথম সিনেমা ‘ভালোবাসা সীমাহীন’-এর পরিচালক শাহ আলম মণ্ডল।  গুলশানের...

বাউফলে ইউএনও’র বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল

নয়ন সিকদার, বাউফল প্রতিনিধি পটুয়াখালীর বাউফলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ বশির গাজীর বিরুদ্ধে অনিয়ম,দুনীতি ও অপসারনের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বৈশোম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। গতকাল...

নিজের চেয়ার ঠিক রাখতেই ব্যস্ত পুলিশ কর্মকর্তারা

দখিনের সময় ডেস্ক: জুলাই ২৪-এর আন্দোলনে গণহত্যার জন্য একক বাহিনী হিসেবে পুলিশকে দায়ী করা হয়। মানুষের ক্ষোভের আগুনে পুড়েছে বাহিনীটির শতশত থানা, যানবাহন। জীবন গেছে...

সংস্কারের আগে নির্বাচন করলে কখনোই সংস্কার হবে না: তোফায়েল

দখিনের সময় ডেস্ক: সংস্কারের আগে নির্বাচন করলে আর কখনোই সংস্কার হবে না। জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় এ মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন সদস্য...

Recent Comments