Home শীর্ষ খবর রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবি

রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবি

দখিনের সময় ডেস্ক:

১৯৭৫ সালের শোকাবহ ১৫ আগস্টের পর আওয়ামী রাজনীতিতে এক অদ্ভুত-অন্ধকার বিপদের নাম ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। ওই দিন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ দলের প্রাণোচ্ছ্বল সব নেতাকর্মীকে হত্যার উদ্দেশে ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে নিক্ষেপ করা হয় ভয়াবহ বুলেট-বোমা। নিমিষেই ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যায় সভা। বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় শহীদ আইভী রহমানসহ অনেকের দেহ।

ভয়াল এ হামলায় ২৪ জন প্রাণ হারান। আর পঙ্গুত্ববরণ করে এখনো অনেকে দুর্বিসহ জীবনযাপন করছেন। কেউ আবার স্পিøন্টারের যন্ত্রণা নিয়ে আজও আসছেন রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে। সেই ভীতিকর ২১ আগস্টের ১৮ বছর আজ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সেদিনের পরিস্থিতি এখন আর নেই। অনেক কিছুই বদলেছে। ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে। বদলায়নি ষড়যন্ত্রকারীদের স্বভাব। তারা ’৭১ থেকে ১৫ আগস্ট ও ২১ আগস্ট হয়ে আবারও ছোবল দেওয়ার অপেক্ষায় আছে। এদের থেকে সাবধান থাকতে হবে। একই সঙ্গে ২১ আগস্ট হামলার যে রায় হয়েছে সেই রায় উচ্চ আদালতে বহাল রেখে রায় বাস্তবায়ন করলে ষড়যন্ত্রকারীদের সামনে অন্তত একটা নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত উপস্থাপন হবে। ভবিষ্যতে যাতে এমন সব অপকর্মে কেউ লিপ্ত না হয়।

আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, এবারের ২১ আগস্টে আমাদের শপথ হবে সন্ত্রাসবিরোধী, জঙ্গিবাদবিরোধী দেশগড়া। সেই সঙ্গে আমাদের দাবি হবে গ্রেনেড হামলায় যারা জড়িত তাদের বিচার কার্যকর করা। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এএম কামাল হোসেন বলেন, যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছিল, তারা স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি, শোকাবহ ১৫ আগস্টের হত্যাকারী এবং এরাই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাকারী। আর এরাই এখনো শেখ হাসিনার উন্নয়ন ও সাফল্যের পটভূমিতে দাঁড়িয়ে লাগাতার মিথ্যাচার, ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তাই জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

নৃশংস এ হামলার রায় বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, হাওয়া ভবনে বসে তারেক রহমান যাদের দ্বারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে এবং যারা নেপথ্যে ছিল তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্থিও দাবি জানাই। আর যাদের বিরুদ্ধে রায় হয়েছে উচ্চ আদালতে তা বহাল রেখে তার দ্রুত বাস্তবায়ন দাবি করি।

অনেক প্রতিবন্ধুকতার মধ্য দিয়ে ২১ আগস্ট হামলায় আহতদের চিকিৎসা সহায়তায় এগিয়ে এসেছিলেন আওয়ামী লীগের বর্তমান স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা। তিনি বলেন, এতগুলো মানুষ মারা গেছেন। ইনজুরড যারা আছে, তারাও তো ভালো নেই। সর্বোপরি এই ভয়াবহ হামলার বিচার যেন জনগণ অচিরেই দেখতে পায় সে ব্যবস্থার দাবি জানাই। একই সঙ্গে মিথ্যা বিচারের নামে ‘জজ মিয়া’ নাটক সাজানোর প্রক্রিয়ার যেন অবসান হয়।

ওই দিনের ইতিহাস থেকে জানা যায়, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের এই দিনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিবিরোধী’ শান্তিপূর্ণ সমাবেশে এই নজিরবিহীন গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় আয়োজিত সমাবেশে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে এসে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ওই ঘটনায় দলীয় নেতাকর্মীরা ‘মানববর্ম’ রচনা করে শেখ হাসিনাকে রক্ষা করেন। গ্রেনেডের আঘাতে আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমান মারা যান। ২১ আগস্টের রক্তাক্ত ঘটনায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ১৬ জন। পরে সব মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৪ জনে।

রক্তাক্ত-বীভৎস ওই ভয়াল গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমান ছাড়াও সেদিন নিহত হন ল্যান্স করপোরাল (অব) মাহবুবুর রশীদ, হাসিনা মমতাজ রিনা, রিজিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা), রতন শিকদার, মোহাম্মদ হানিফ ওরফে মুক্তিযোদ্ধা হানিফ, মোশতাক আহমেদ, লিটন মুনশি, আবদুল কুদ্দুছ পাটোয়ারী, বিল্লাল হোসেন, আব্বাস উদ্দিন শিকদার, আতিক সরকার, মামুন মৃধা, নাসির উদ্দিন, আবুল কাসেম, আবুল কালাম আজাদ, আবদুর রহিম, আমিনুল ইসলাম, জাহেদ আলী, মোতালেব ও সুফিয়া বেগম। গ্রেনেডের স্পিøন্টারের সঙ্গে লড়াই করে ঢাকার মেয়র মোহাম্মদ হানিফসহ আরও কয়েকজন মারা যান। এই ভীতিকর পরিস্থিতির এখানেই শেষ হয়নি। একদিকে স্বজন হারানোর, অন্যদিকে গ্রেনেড হামলার পর ভয়, শঙ্কা ও ত্রাস বিরাজ করে শহরজুড়ে। চাপা ক্ষোভ ও শোক আছড়ে পড়ে দেশ-বিদেশে। হামলার পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নিজে বাঁচতে ও অন্যদের বাঁচাতে যখন ব্যস্ত হয়ে পড়েন, ঠিক তখনই পুলিশ বিক্ষোভ মিছিলের ওপর বেধড়ক লাঠি-টিয়ারশেল চার্জ করে। একই সঙ্গে নষ্ট করা হয়, সেই রোমহর্ষক ঘটনার যাবতীয় আলামত। পরে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রত্যক্ষ মদদে ওই ঘটনা ধামাচাপা দিতে ‘জজ মিয়া’ নাটক সাজায় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার।

ইতিহাসের এই জঘন্যতম গ্রেনেড হামলার ১৮তম বার্ষিকীতে শ্রদ্ধাবনতচিত্তে হামলায় নিহতদের স্মরণ করছে আওয়ামী লীগ ও তাদের শুভানুধ্যায়ীরা। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দিনটি পালনে কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নির্মিত শহীদ বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করা হবে। এ ছাড়া সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে ২১ আগস্টের নারকীয় গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদ ও নিহতদের স্মরণে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (সরাসরি উপস্থিত থেকে) সভাপতিত্ব করবেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করার জন্য আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

শিবিরকে প্রকাশ্যে রাজনীতি চর্চার আহ্বান ছাত্রদল সেক্রেটারির

দখিনের সময় ডেস্ক: বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে প্রকাশ্যে গণতান্ত্রিক রাজনীতি চর্চার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সেক্রেটারি নাসির উদ্দিন। মঙ্গলবার দৈনিক কালবেলার সঙ্গে এক সংক্ষিপ্ত আলোচনায় নাসির...

দাঁতে ব্যথা দূর করার ঘরোয়া উপায়

দখিনের সময় ডেস্ক: দাঁতের ক্ষয়, চোয়াল বা দাঁতের মধ্যে সংক্রমণ, মাড়ির রোগ বা আঘাতের মতো বিভিন্ন কারণে দাঁত ব্যথা হতে পারে। এই ব্যথা দৈনন্দিন সব...

শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন: সোহেল তাজ

দখিনের সময় ডেস্ক: সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল বলেছেন, শেখ হাসিনা আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।...

১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন হতে অন্তর্র্বতী সরকারকে সাহায্য করবে সেনাবাহিনী: জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান

দখিনের সময় ডেস্ক: সেনাপ্রধান বলেছেন রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কার করে ১৮ মাসের মধ্যে যেন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে, সে জন্য অন্তর্র্বতী সরকারকে সাহায্য করবে সেনাবাহিনী।‘যাই হোক...

Recent Comments