Home লাইফস্টাইল শিশুর দাঁতের যত্নে করণীয়

শিশুর দাঁতের যত্নে করণীয়

দখিনের সময় ডেস্ক:
শুরু থেকেই শিশুর দাঁতের যত্ন নেওয়া জরুরি। এতে পরে অনেক সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। শিশুর দাঁতের যত্ন নিয়ে লিখেছেন অ্যাডভান্স হাসপাতালের চিফ কনসালট্যান্ট ও ডেন্টাল সার্জন ডা. সাদিয়া আফরোজ মৌরি।
ছোট থেকেই সন্তানের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে মা-বাবার চিন্তার অন্ত থাকে না। এর মধ্যে অন্যতম একটি বিষয় হচ্ছে, সন্তানের বিভিন্ন বয়সে দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা। প্রায়ই তাঁদের সন্তানের দাঁতের সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয়। শিশুর সুন্দর দাঁতের জন্য সন্তানধারণের পর থেকেই মাকে কিছু বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
গর্ভাবস্থায় করণীয়
মায়ের গর্ভাবস্থায়ই শিশুর দাঁতের কাঠামো তৈরি হয়। তাই এ সময় গর্ভবতী মায়ের বেশি করে পুষ্টিকর এবং ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া প্রয়োজন। এতে শিশুর দাঁতের গঠন ভালো হবে। এ ছাড়া শিশুর সুন্দর ও সুস্থ দাঁতের জন্য গর্ভাবস্থায় যেকোনো রকম ওষুধ সেবনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। গর্ভবতী মাকে টেট্রাসাইক্লিন ওষুধ সেবন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
জন্মের পর থেকে ছয় মাস
নবজাতকের মুখে প্রথম দাঁত গজায় ছয় মাস বয়সে। এর আগে থেকেই মাড়ি ও মুখগহ্বরের কিছু যত্ন নিতে হবে। এতে শিশু মুখগহ্বরের বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্ত থাকবে। পাশাপাশি নতুন দাঁত ওঠার সময় অস্বস্তি কম পোহাবে। শিশুর মুখে দাঁত জন্মের শুরু থেকেই পরিষ্কার পানিতে পরিষ্কার নরম কাপড় ভিজিয়ে দাঁত, মাড়ি ও মুখগহ্বর পরিষ্কার করে দিতে হবে। দাঁত ওঠার আগে শিশুদের মাড়িতে অস্বস্তির ভাব হয়। মাড়ি ফুলে যায়। কিছু কামড়াতে চায়। এ সময় নরম নন-টক্সিক ম্যাটেরিয়ালে তৈরি টিথার দেওয়া যেতে পারে। ফ্রিজে রেখে ঠাণ্ডা করে শিশুকে দিতে হবে। ঠাণ্ডা স্থানে কামড় বসালে শিশুর আরাম লাগবে। শিশুর এই সময় একটু খিটখিটে মেজাজ, জ্বর হওয়া স্বাভাবিক। এ সময় চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করাতে হবে।
১ থেকে ৫ বছর বয়সের শিশুর দাঁতের যত্ন
শিশুদের দু-তিন বছরের মধ্যে মোট ২০টি দাঁত উঠে যায়। শিশুর বয়স এক বছর থেকেই থুতু ফেলা, কুলি করা শেখানো শুরু করতে হবে। এ সময় একটি চালের দানার পরিমাণ টুথপেস্ট ভালো ও নরম ব্রাশে লাগিয়ে ব্রাশ করাতে হবে। দুই থেকে পাঁচ বছর বয়সে টুথপেস্টের পরিমাণ বাড়িয়ে মটরদানার সমান টুথপেস্ট দেওয়া যেতে পারে। বাজারে বয়স অনুযায়ী টুথপেস্ট ও ব্রাশ পাওয়া যায়। শিশুর বয়স অনুযায়ী টুথপেস্ট ও ব্রাশ ব্যবহার করতে হবে।
অল্প বয়স থেকেই শিশুদের দুই বেলা দাঁত ব্রাশের অভ্যাস করাতে হবে। রাতে ঘুমানোর আগে লক্ষ্য রাখতে হবে, যেন ব্রাশ করার পর অন্য কোনো খাবার সে না খায়। সকালে খাবার খাওয়ার পর শিশুকে ব্রাশ করাতে হবে।
অবহেলায় যেসব ক্ষতি
ছোট থেকে শিশুর দাঁতের সঠিক পরিচর্যা না হলে দাঁতে ক্ষয়রোগ হতে পারে। বাচ্চাদের অনেক সময় একই সঙ্গে অনেক দাঁত ক্ষয়ে যেতে দেখা যায়। কালো হয়ে ভেঙে যায়। এই রোগ প্রতিরোধ করতে দাঁত ওঠার পর থেকেই নিয়মিত পরিষ্কার রাখা জরুরি। শিশুর দাঁতে যদি বাদামি বা কালো দাগ দেখা যায়, তাহলে দ্রুত নিকটস্থ ডেন্টিস্টের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
৬ থেকে ১০ বছর
ছয় বছর বয়স থেকে শিশুদের দুধদাঁত পড়ে গিয়ে স্থায়ী দাঁত ওঠে। এ সময় মা-বাবাকে খেয়াল রাখতে হবে দাঁতগুলো নড়ছে কি না। বাচ্চাকে নিয়মিত দাঁত নাড়াতে বলতে হবে। দাঁত নড়া শুরু হলে ভালোভাবে নাড়িয়ে ফেলে দিতে হবে। বাসায় কোনোভাবে সম্ভব না হলে বা পেছনে বা পাশে স্থায়ী দাঁত উঠে গেলে ডেন্টিস্টের কাছে নিয়ে যেতে হবে। দাঁতে গর্ত থাকলে এ সময়ই চিকিৎসি নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, নির্দিষ্ট সময়ের আগে দাঁত ফেলা উচিত নয়।
এতে দাঁত আঁকাবাঁকা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ৮-৯ বছর বয়সের বাচ্চাদের সামনের দুই দাঁতের মাঝে ফাঁকা থাকে। এটা স্বাভাবিক। সব স্থায়ী দাঁত উঠে গেলে ১২-১৩ বছর বয়সে তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ঠিক হয়ে যায়।
১১ থেকে ১৫ বছর
এ সময়ের মধ্যে সব দুধদাঁত পড়ে গিয়ে স্থায়ী দাঁত উঠে যায়। দাঁত আঁকাবাঁকা থাকা বা ফাঁকা থাকা, তা এ সময়ে এসে অনেকটাই ঠিক হয়ে যায়।
কিছু ক্ষেত্রে শিশুর শারীরিক গঠন বা জেনেটিক কারণে দাঁত আঁকাবাঁকা বা হাড়ের গঠনের সমস্যা থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রে অর্থোডন্টিক চিকিৎসায় দাঁত ও চোয়ালের গঠন ঠিক করা সম্ভব। চিকিৎসায় খুব দ্রুত ফল পাওয়া যায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

নিজের চেয়ার ঠিক রাখতেই ব্যস্ত পুলিশ কর্মকর্তারা

দখিনের সময় ডেস্ক: জুলাই ২৪-এর আন্দোলনে গণহত্যার জন্য একক বাহিনী হিসেবে পুলিশকে দায়ী করা হয়। মানুষের ক্ষোভের আগুনে পুড়েছে বাহিনীটির শতশত থানা, যানবাহন। জীবন গেছে...

সংস্কারের আগে নির্বাচন করলে কখনোই সংস্কার হবে না: তোফায়েল

দখিনের সময় ডেস্ক: সংস্কারের আগে নির্বাচন করলে আর কখনোই সংস্কার হবে না। জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় এ মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন সদস্য...

না ভোট ফিরিয়ে আনার সুপারিশ সংস্কার কমিশনের

দখিনের সময় ডেস্ক: সরাসরি রাষ্ট্রপতির নির্বাচন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কোনো প্রার্থী নির্বাচিত না হওয়া, না ভোট ফিরিয়ে আনা ও অর্থের উৎসের স্বচ্ছতা নিশ্চিতসহ বেশ কয়েকটি সুপারিশ...

সুযোগ পেলে গলা চেপে ধরবে আ.লীগ: রিজভী

দখিনের সময় ডেস্ক: গণহত্যার জন্য বর্তমানে আওয়ামী লীগ ক্ষমা চাওয়ার কথা বললেও, সুযোগ পেলে আবারও তারা মানুষের গলা চেপে ধরবে। এমনটাই মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র...

Recent Comments