দখিনের সময় ডেস্ক:
মাঝে মাঝে মনে হয় সন্তানের আচরণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে, এটা বাবা-মায়ের কাছে একেবারেই নতুন কিছু নয়। সব বাবা-মা এসবের ভেতর দিয়ে যান। মোটামুটি সব শিশুর ব্যবহারে পরিবর্তন আসে, নিয়ম ভাঙে বা মেজাজ বিগড়ে যায়। এগুলো শিশুদের মধ্যে থাকলেও যদি তা অতিরিক্ত হয়ে যায় তবে বোঝা যায় তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এই লেখাটি পড়লে বুঝতে পারবেন শিশুদের ব্যবহার যে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে এবং এ ব্যাপারে আপনার করণীয়।
ঘন ঘন খিটখিটে আচরণ বা মেজাজ দেখানো
ছোট বাচ্চাদের মধ্যে ‘টেম্পার ট্যানট্রাম’ বা মেজাজ দেখানো স্বাভাবিক। কিন্তু বয়সের সঙ্গে সঙ্গে এর তীব্রতা কমে আসে। যদি শিশু পাঁচ বছর বয়সের পরেও আপনি শিশুর ঘন ঘন এবং তীব্র মেজাজের যন্ত্রণার সম্মুখীন হন, তবে এটি একটি লক্ষণ হতে পারে। তার মানে তার আচরণগত সমস্যা হচ্ছে।
আরো কিছু আচরণ, যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে দেখা যায় :
> কান্নাকাটি করা, চিৎকার করা বা অত্যধিক চিৎকার করা।
> লাথি, ঘুষি বা অন্যকে আঘাত করা।
> নিজের শ্বাস আটকে রাখা, নিস্তেজ হয়ে যাওয়া বা তাদের শরীরে টান ধরে আসা।
বাচ্চারা যখন যা চায় তা না পেলে অন্যদের কাছ থেকে মনোযোগ আকর্ষণ করতে চায়। তখনই তারা এ ধরনের আচরণ শুরু করতে পারে। ক্লান্ত, ক্ষুধার্ত বা হতাশ থাকলেই এ ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
অন্যের সঙ্গে যোগাযোগে সমস্যা
আরেকটি লক্ষণ হতে পারে, অন্যান্য শিশু এমনকি প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে ঘন ঘন মিশতে সমস্যা হওয়া। যেমন-
> প্রায়শই অন্য শিশুদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়ে এবং এর কোনো সমাধান হয় না।
> এই ধরনের দ্বন্দ্বের জন্য সব সময় অন্যদের দোষারোপ করা। কিন্তু নিজের কী ভুল সেটা না দেখা।
> স্কুলে বা অন্যান্য অবস্থায় অন্য শিশুদের সঙ্গে চলতে পারে না।
> বন্ধুত্ব বজায় রাখার জন্য তাদের কষ্ট করতে হয়।
> প্রায়ই তাদের আচরণ প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সম্মানজনক নয়।
> শিশুকে প্রায়ই সামাজিক কিছু কাজ থেকে বাদ দেওয়া হয়, কারণ তাদের আচরণ অন্যদের কষ্ট দেয় বা বিরক্ত করে।
এগুলো সমস্যার কারণে বাচ্চারা নিজেদের সমাজ থেকে আলাদা ভাবতে পারে এবং তাদের আত্মসম্মানের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।
আবেগের সমস্যা
শিশুদের আচরণের সঙ্গে যুক্ত আরেকটি সমস্যা হলো- আবেগ সামলাতে সমস্যা হওয়া। যদিও বাচ্চারা আবেগের সঙ্গে বেশি যুদ্ধ করে এবং বড় হতে হতে এটা নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু তাদের মধ্যেও মানসিক অস্থিরতা বেশি দেখা দিতে পারে। যেমন-
> তীব্র ক্রোধ, নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া মেজাজ।
> তীব্রভাবে হতাশ হয়ে যাওয়া
> হতাশার সঙ্গে মোকাবেলা করতে সমস্যা হওয়া।
> ঘন ঘন কান্না করা এবং চরম মেজাজ।
আরো অনেক লক্ষণ যেমন
> অন্যের মনোযোগ পেতে অভিনয় করা।
> রাগ বা হতাশ হলে অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখানো।
> কিশোরদের ক্ষেত্রে ধূমপান, মদ্যপান বা ড্রাগের ব্যবহার
> কর্মের পরিণতি সম্পর্কে চিন্তা না করা
> জিজ্ঞেস না করে জিনিস নেওয়া
> খুব অধৈর্য
** গুরুতর আচরণগত সমস্যা
নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া আচরণ আরো গুরুতর হতে পারে। যেমন-
> নিয়ম ভঙ্গ করা। যেমন স্কুল পালানো, পালিয়ে যাওয়া বা রাতে বাইরে থাকা
> ধমক, মারামারিসহ মনুষ বা প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা বা ক্ষতি করা।
> চুরি করা, মিথ্যা বলা বা অন্যের ক্ষতি করা
> প্রাপ্তবয়স্কদের অনুরোধ বা নিয়ম না মানা।
> নিজের ক্ষতি করা, আত্মহত্যার চিন্তা করা বা আত্মঘাতী আচরণ করা।
সন্তানের আচরণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে কী করবেন?
যদি মনে করেন এমন কিছু ঘটছে আপনার সন্তানের সঙ্গে, তাহলে কিছু পদক্ষেপ নিতে পারেন।