আলম রায়হান
‘সাদিক বরিশাল ছাড়া’- এটি বাস্তবতা। এ ক্ষেত্রে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর কোন ব্যর্থতা নেই তা মনে করার কোন নেই। তবে তার কিছু সাফল্যও আছে। তা যত না মেয়র হিসেবে, তার চেয়ে শতগুণ বেশি সাফল্য বরিশালের রাজনীতির ক্ষেত্রে। ফলে মেয়র মনোনয়ন না পাওয়ায় ব্যক্তি হিসেবে ইমেজ ক্ষতিগ্রস্থ হলেও রাজনীতির বিষয়টি রয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। ওই একটা প্রবচন আছে না, ‘…..বাদশার মার খাটের নীচে।’ দেখা যায় না, কিন্তু বিরাজমান।
এখানেই ৭৫-এর থিংকট্যাংক-এর আতংক। এর সঙ্গে সাদিক প্রশ্নে এখনো সিদ্ধান্তহীনতায় আছে বিএনপি। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্র এবং বরিশাল বিএনপির চিন্তা এখনো দুই মুখি। সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগ বিরোধী নেপথ্য খেলোয়াররা ১২ জুনের নির্বাচনে ভোট ব্যাংকের খেলা নির্ধারণ করতে পারছেন না। কেননা, শুরুতে মনে করা হয়েছিলো, মনোনয়ন না পাওয়ায় বরিশালে সাদিক পর্বের অবসান হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে সেই হিসেবে মিলছে না। বরং রাজনৈতিক দৃষ্টিকোনে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ এখন অধিকতর শক্তিশালী। এটি সবার কাছেই স্পষ্ট।
এর সঙ্গে মেয়র হিসেবেও সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর গুণকীর্তণ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, নগরীর উন্নয়ন কাজ যতটুকু হয়েছে তা হয়েছে খুবই টেকসই। ‘লিপিস্টিক উন্নয়নের’ ধার দিয়েও হাটেননি মেয়র সাদিক। সবকিছুকে ছাপিয়ে আলোচনার শীর্ষে আছে বিপন্ন মানুষের পাশে সাদিকে দাঁড়ানোর নানান ঘটনা এবং মিথ। তা হোক ব্যাংক লোন অথবা চিকিৎসা। বলাই হয়, সাদিক পর্যন্ত পৌছাতে পারলেই হলো। খালি হাতে কেউ ফেরেনা ‘খাজার দর্বারে’-এর প্রবচনের মতো।
অভিজ্ঞ মহল জানেন, পাকহানাদার বাহিনীর আনুষ্ঠানিক আত্মসমার্পনের মাধ্যমে বাংলাদেশ হানাদার মুক্ত হয়েছে ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু বরিশাল হানাদার মুক্ত হয়েছে ৮ ডিসেম্বর। এ ক্ষেত্রে ভারত হিজরতকারী মুক্তিযোদ্ধা এবং বরিশালের নেতাদের কোন অবদান ছিলো না। বরং তারা আসার পরই শুরু হয় হট্টগোল। সেই হট্টগোল ক্রমাগত বাড়তে থাকে। যা এক পর্যায় বিষবৃক্ষে পরিণত হয়। যে বিষবৃক্ষের ছায়ায় আশ্রয় নেয় স্বাধীনতা বিরোধী চক্র। কারোরই অজানা নয়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়। একই সময় আবদুর রব সেরনিয়াবাত ও শেখ ফজলুল হক মনির বাড়িতে চলে হত্যালীলা। এ ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশ হতবিহ্বল হয়ে যায়। কিন্ত এই খবর রেডিওতে প্রচারের আগেই বরিশালে কাকডাকা ভোরে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী চক্রটি নূরুল ইসলাম মঞ্জুর এবং আ স ম ফিরোজের নেতৃত্বে স্বরূপে আত্মপ্রকাশ করে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কাকডাকা ভোরে নুরুল ইসলাম মঞ্জুর বাড়ি থেকে বের বিশাল ‘আনন্দমিছিল’। মিছিল শেষে নগরীর সদর রোডে আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে আনন্দ সমাবেশ করা হয়। এ জন্য একটি ট্রাককে বানানো হয় মঞ্চ। এই ট্রাক মঞ্চের বক্তা হিসেবে মহিউদ্দিন আহমেদ (পিস্তল মহিউদ্দিন) এবং আ স ম ফিরোজের উল্লাশ ও লম্ফঝম্ফ উপস্থিত কারোরই দৃষ্টি এড়ায়নি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কাকডাকা ভোরে বরিশালবাসী যে উল্টো স্রোতে দৃশ্যমান হয় তাই প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় দ্রুত। বরিশালের রাজনীতি চলে যায় মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তির নিয়ন্ত্রণে। সামনে দৃশ্যমান হন আবদুর রহমান বিশ্বাস। নেপথ্যে থাকে ৭৫-এর থিংকট্যাংক।
৭৫-এর থিংকট্যাংক-এর কবল থেকে বাংলাদেশের রাজনীতি টেনে তুলে অসাধ্য সাধন করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। আর বরিশালের বৈরিতার বিরুদ্ধে বিরামহীন লড়েছেন বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে এবং আবদুর রব সেরনিয়াবাতের পুত্র আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। বলা হয়, তিনিই বরিশাল বিভাগে আওয়ামী লীগের বাতী জ্বালিয়ে রেখেছেন। এ জন্য তাকে অনেক অপ্রিয় কাজও করতে হয়েছে বলে রটনা আছে।
একটি মহল মনে করেছিলো, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ মৃত্যু হলে বরিশালে আওয়ামী লীগের রাজনীতির অবসান হবে। কিন্তু সাদিক আবদুল্লাহকে সামনে নিয়ে আসায় এ ধারণায় অন্যমাত্রা যুক্ত হয়। এরপর মেয়র নির্বাচনে সাদিক আবদুল্লাহকে পরাজিত করার জন্য ৭৫-এর থিংকট্যাংক মরিয়া হয়ে মাঠে নামে। আর এর বিপরীতে যে কাজ করা হয় তা হয়ে গেছে ‘ঘি দিয়ে তামাক’ মাখার মতো খেলো। পরাজিত মজিবুর রহমান সরোয়ার সাথে বিজয়ী সাদিক আবদুল্লাহর ভোটের ব্যাবধান কারো কাছেই বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি। কারো কারো ধারণা, ভোটের এই আজগুবী ব্যবধান সৃষ্টির পিছনেও খেলা ছিলো। তবে এতো খেলেও স্বস্তিনেই ৭৫-এর থিংকট্যাংক। বরং নতুন করে আতংকে পড়েছে সাদিককে নিয়ে! যে কারণে এই চক্রটি যেকোনো মূল্যে সাদিক আবদুল্লাহর বরিশাল আগমন ঠেকাতে চায়। কিন্তু এখনো এ বিষয়ে কৌশল চূড়ান্ত করা যায়নি বলে সূত্রে জানা গেছে।