হিমাগারগুলোতে যে পরিমাণে আলু রয়েছে, তার প্রায় ৪০ ভাগ কৃষকদের, বাকিটা মজুতদার-আড়তদারদের। আবার কৃষকের আলুর ১৫ শতাংশ বীজ আলু। সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে আলু বিক্রি করলে হিমাগার পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা বস্তাপ্রতি ৫০০ টাকার মতো অতিরিক্ত মুনাফা থেকে বঞ্চিত হবেন। বিষয়টি তারা মানতে পারছেন না। সরকার বর্তমানে হিমাগারে থাকা আলু নিলাম করার কথাও বলেছে। কিন্তু নিলাম করলে সেই আলু তো মজুতদার-আড়তদাররাই কিনবেন। এদিকে সদাশয় সরকার আলু আমদানির কথাও বলছেন। আমদানি করলে দাম হয়তো কমে আসবে। তবে তাতে ব্যবসায়ীদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল।
পাশাপাশি ভেঙে যাবে সনাতনী সরবরাহ চেইন। সে ক্ষেত্রে তারা আলুর ব্যবসা থেকে সরে এলে এবং কৃষকরা আলু উৎপাদন কমিয়ে দিলে অন্য রকম সংকট তৈরি হবে। এদিকে অনেকে মনে করেন, সরকার বছরের শুরুতে আলু কিনে ক্রমান্বয়ে বাজারে ছাড়লে দাম নিয়ন্ত্রণে থাকত। দেশে উৎপাদিত অতিরিক্ত আলু বিগত বছরগুলোতে চাষি এবং ব্যবসায়ীদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াত। পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে, বর্তমানে দেশের হিমাগারগুলোতে যে পরিমাণ আলু আছে, তা দিয়ে ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত ভালোভাবে চলার কথা। এর মধ্যেই বাজারে নতুন আলু উঠে যাবে। ফলে ঘাটতির কোনো কারণই নেই। খোদ বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, দেশে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮৫ লাখ টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে এ পরিমাণ ১ কোটি ১২ লাখ টন। দেশে আলুর চাহিদা ৯০ লাখ টন। বোঝাই যাচ্ছে আলুর কোনো ঘাটতি নেই। সংবাদ সম্মেলন করে হিমাগার মালিকদের সংগঠন অভিযোগ করেছে, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কারসাজি করে আলুর দাম বাড়াচ্ছেন।
তাহলে কি আমজনতা ধরে নিতে বাধ্য হবে, সরকার পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, ডিম, আলু এমনকি ডাবের মতো প্রায় সব খাদ্যপণ্যের বিক্রেতা সিন্ডিকেটের প্রতি সহানুভূতিশীল? নাকি অংশীজন! তাই একেক সময় একেক পক্ষকে সুযোগ করে দিচ্ছে? নাকি ‘বগলে ইট, মুখে শেখ ফরিদ’ অবস্থায় আছে সরকার? এদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সংসদে সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে যা বলেছেন, তা তো অসহায় আত্মসমর্পণ ছাড়া আর কিছু নয়। যদিও রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সবসময় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। যদিও বলা হচ্ছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ে বাংলাদেশকে ভুগতে হচ্ছে। এ বয়ান শুনতে শুনতে আমরা হয়রান। অথচ জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এফএও বলেছে, বৈশ্বিক খাদ্যমূল্যের সূচক গত আগস্টে দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে এসেছে। কারণ চাল ও চিনির দাম বাড়লেও এর আগের মাসে বেশিরভাগ খাদ্যপণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে অনেক কমে যায়।
এফএও বলছে, ভারতের রপ্তানি বিধিনিষেধের পর চালের দাম ১৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ হওয়া সত্ত্বেও সামগ্রিক সূচকে দুগ্ধজাত পণ্য, তেল, মাংস ও খাদ্যশস্যের দাম কমেছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী আবদুল মান্নানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেছেন, ‘সাপের খেলা যে জানে, সে ঠিকই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।’ তাহলে কি দ্রব্যমূল্য নিয়ে সরকার আমজনতার সঙ্গে সাপলুডু খেলছে!
# দৈনিক কালবেলায় প্রকাশিত, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৩