রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস করতেন, পুলিশ সমাজেরই প্রতিনিধি এবং ইচ্ছা করলেই ইংরেজ শাসিত ও আশ্রিত সেই পুলিশকে সহজেই বদলানো সম্ভব ছিল না। পুলিশ সম্পর্কে কখনো কখনো নেতিবাচকতার মধ্যেও ইতিবাচকতার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি, যে ইঙ্গিতের মধ্যে পুলিশ সংস্কারের বিষয়টি প্রণিধানযোগ্য। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আচ্ছন্ন সনাতনী প্রবণতায় তমসাচ্ছন্ন তৎকালীন সেই পুলিশের পরিবর্তনের পক্ষে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ, যার পথে বাধা হিসেবে তিনি চিহ্নিত করেছেন সমাজব্যবস্থার জটিলতম পরিকাঠামোকে। অতীত থেকে সাম্প্রতিক বাস্তবতায় আশাভরসার প্রয়োজন। এমনকি অপ্রয়োজনেও মানুষকে পুলিশের দ্বারস্থ হতে হয়। উল্লেখ্য, কমিউনিটি পুলিশিংয়ের ধারণাও রবীন্দ্রনাথ দিয়েছিলেন।
কারও কারও মতে, রবীন্দ্রনাথের পুলিশভাবনা থেকেই অনেকখানি প্রভাবিত হয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যে কারণে পাকিস্তানের ২৪ বছরের দুঃশাসনে পুলিশের রণচণ্ডী মূর্তি দেখার স্মৃতির প্রভাব থেকে উঠে এসে স্বাধীন বাংলাদেশে পুলিশ নিয়ে বঙ্গবন্ধু গভীরে গিয়ে অন্যরকম ভাবতে পেরেছেন। তাঁর এ অনুভূতির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ ঘটে ১৯৭৫ সালের ১৫ জানুয়ারি প্রথম পুলিশ সপ্তাহ অনুষ্ঠানে। সেদিন জাতির জনকের ভাষণ আজও প্রাসঙ্গিক। তিনি বলেছিলেন, ‘মনে রাখবেন, আপনাদের মানুষ যেন ভয় না করে। আপনাদের যেন মানুষ ভালোবাসে। আপনারা জানেন, অনেক দেশে পুলিশকে মানুষ শ্রদ্ধা করে। আপনারা শ্রদ্ধা অর্জন করতে শিখুন।’ তিনি বলেছিলেন, ‘আজ থেকে শুরু হোক আপনাদের নতুন জীবন। এই পুলিশ সপ্তাহ থেকে আপনারা নতুন মনোভাব নিয়ে কাজ শুরু করুন, যাতে বাংলাদেশের পুলিশ দুনিয়ার বুকে গর্বের বস্তু হয়ে উঠতে পারে। এটিই আমি চাই আপনাদের কাছে। আপনাদের জন্য আমার সহানুভূতি আছে। আপনারা জানেন, আপনাদের আমি ভালোবাসি। আপনাদের জন্য চব্বিশ ঘণ্টা কাজ করেও আমি ক্লান্তিবোধ করি না। কিন্তু আমি চাই, আপনারা মানুষকে ভালোবাসুন। তা হলেই শান্তি আসবে।’
জাতির পিতা বাংলাদেশ পুলিশের শুরুর দিকটাও ভোলেননি। তিনি বলেছেন, ‘আমার মনে আছে যেদিন আমি জেল থেকে বের হয়ে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের বুকে ফিরে আসি, সেদিন দেখেছিলাম আমাদের পুলিশ বাহিনীর না আছে কাপড়, না আছে জামা, না কিছু। অনেককে আমি ডিউটি করতে দেখেছি লুঙ্গি পরে। একদিন রাতে তারা আমার বাড়ি গিয়েছিল। তাদের পরনে ছিল লুঙ্গি, গায়ে জামা, হাতে বন্দুক।’
# বাংলাদেশ প্রতিদিন-এ প্রকাশিত ৮ অক্টোবর ২০২৩