দৈনিক দখিনের সময় ৩১ জুলাই প্রকাশিত ‘‘ধনকুবের সাবেক সচিব নাজিম চৌধুরী অপ্রতিরোধ্যঃ গ্রাস করেছেন ভোলার পুরো চর’’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। প্রতিবাদ লিপিতে বলা হয়েছে, ভোলা জেলার মনপুরা উপজেলার ঢালচর গ্রামে সাবেক সচিব নাজিমউদ্দিন চৌধুরী সম্পর্কে যে সকল অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে তার একটি তথ্যভিত্তিক ব্যাখ্যা দেওয়া হলোঃ
“ঢালচর মেঘনার বুকে জেগে উঠা একটি চর। এই চরের জেলা সীমানা নিয়ে ১৮৮৫ সাল হতে জমিদার এবং সরকারের মধ্যে আইনী যুদ্ধ হয়। জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার প্রাক্কালে জমিদারের প্রতিনিধি এ জমির বন্দোবস্ত দেয়। বন্দোবস্ত প্রাপ্ত ৩৬০ জন এর অনুকূলে রেকর্ড সৃজিত গৃহিত হয়। তখন হতেই এই চরের জমি কোন জেলার অন্তর্গত তা নিয়ে বিরোধ শুরু হয়। বন্দোবস্ত দেওয়ার কালে ডেম্পিয়ার এগ্রিকালচার ও ডেয়ারী ফার্ম লিমিটেড যা ১৯৫৬ সালে নিবন্ধনকৃত- এর প্রথম ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব নাজিমউদ্দিন চৌধুরীর পিতা মরহুম জনাব বসারত উল্ল্যা চৌধুরী। তখন হতেই এই কোম্পানী ঢালচরে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ ও পশু পালন শুরু করেন। কিন্তু বরিশাল ও নোয়াখালীর আন্তজেলার সীমানা বিরোধের কারণে নানা প্রকার বিরোধ বিবাদ এবং ফৌজদারী ও দেওয়ানী মামলা শুরু হয়। অন্যদিকে নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক নিজ ক্ষমতাবলে নোয়াখালীর হাতিয়া থানার কিছু সংখ্যক লোককে ঢালচরের কিছু জমি একসনা ইজারা দেয়। আন্তজেলা সীমানা নির্ধারনের মামলা চূড়ান্তভাবে সুপ্রিমকোর্টে ভোলার পক্ষে নিষ্পত্তি হয় এবং উচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী মহাপরিচালক ভূমি জরিপ অধিদপ্তরের কার্যালয় হতে আন্তজেলা সীমানা নির্ধারণ করে পিলার স্থাপন করেন। কাজেই ঢালচরের সমুদয় জমি বিভিন্ন মানুষের রেকর্ডীয় সম্পত্তি, ভোলা জেলার সরকারী কাগজপত্রে এখানে কোন ভূমিহীনের জমি নাই। ভূমি মন্ত্রনালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ও সরকারী রেকর্ড অনুযায়ী ভূমির মালিকদের নিকট হতে ভূমি কর আদায় করা হয়। নাজিমউদ্দিন চৌধুরী ও তার পরিবারের সদস্যরা উত্তরাধিকার সূত্রে এই সম্পত্তির মালিক, যার প্রমাণ মিলবে মনপুরা উপজেলার ভূমি অফিসে, হাতিয়াতে নয়। এখানে উল্লেখ্য যে মনিরুল মোস্তফা নামে যে কাল্পনিক ব্যাক্তি মনপুরার চৌধুরী বাড়ীতে জমি ফিরে পাওয়ার আশায় গিয়েছিলেন তা সম্পূর্ন ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা। কারণ ঐ বাড়ী ১৯৯২ সালে নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
স্বাধীনতার পরে দুই বিবাদমান জেলার লোক আপোষ মীমাংশায় উত্তরের অংশে হাতিয়ার লোক এবং দক্ষিণের অংশে মনপুরার লোক ভোগদখল করতে থাকে। নাজিমউদ্দিন চৌধুরী ও তার পরিবারের সকল জমি দক্ষিণের অংশে। তার সাথে জমি নিয়ে ঢালচরের কোন লোকের বিরোধ কখনও কেউ শোনেন নাই। ঢালচরের উপরে উচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী নোয়াখালী জেলার ভূমি প্রশাসন ও জেলা পুলিশের কর্তৃত্ব বহির্ভূত বলে ঘোষণা করা হয়েছে। কাজেই হাতিয়া হতে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে প্রনীত প্রতিবেদন সঠিক হওয়ার কোন অবকাশ নাই।
সাবেক সচিব নাজিমউদ্দিন চৌধুরী ঢালচরে শিক্ষা ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্যসেবার জন্য তার ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে ঢালচরে একটি অবৈতনিক প্রাইমারী স্কুল এবং একটি চিকিৎসালয় স্থাপন করেন। এই অবৈতনিক প্রাইমারী স্কুলটি মনপুরা উপজেলার প্রাইমারী পরীক্ষায় এবং বৃত্তি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ফলাফলের অধিকারী। উল্লেখ্য যে ঢালচরে এই স্কুল ব্যতীত আর কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নাই এবং চিকিৎসা কেন্দ্র নাই। তিনি ২০০২ সাল হতে পারিবারিক জমিতেই কৃষিকাজ, মৎস্য চাষ ও পশুপালন শুরু করেন। সরকারী অনুমতি নিয়েই তিনি এ সকল কাজ শুরু করেন। ২০১৮ সালে কৃষিকাজে তার সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরুপ সরকার তাকে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি স্বর্ণপদক প্রদান করেন এবং তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট হতে পদক গ্রহণ করেন। ঢালচরে তিনি উন্নত পদ্ধতির মাছের খামার এবং মহিষের খামার স্থাপন করে বেশ কিছু লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন এবং নাজিমউদ্দিন চৌধুরীর পিতা মরহুম বসারত উল্ল্যা চৌধুরী ৬০ দশকের প্রথম হতেই দক্ষিণাঞ্চলের খ্যাতিমান সমাজসেবক ও ব্যবসায়ী ছিলেন। মিল কারখানা, পরিবহন এবং ঠিকাদারী ব্যবসায় তার যথেষ্ট খ্যাতি ছিল। তিনি আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য কর্মী ছিলেন। দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে তার অগ্রণী ভূমিকা ছিল। স্বাধীনতা আন্দোলন সংগঠনের জন্য তিনি ভারতে চলে যান এবং তিনি একজন সনদপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। এদিকে পাকিস্তানী সমর্থকরা তার অধিকাংশ সম্পত্তি ধ্বংস করে দেয়। কাজেই পাকিস্তানীদের সহায়তায় ১৯৭১ সালে ঢালচরের জমি দখল করার কাহিনী সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং উদ্দেশ্য প্রনোদিত ।
২০০২ সাল হতে নাজিমউদ্দিন চৌধুরী চাকুরী ক্ষেত্রে চরম হয়রানীর স্বীকার হন। ঘন ঘন বদলী, পদোন্নতি না দেওয়া এবং পোষ্টিং না দেওয়ার মত কার্যক্রম তদানীন্তন সরকার গ্রহণ করেছিলেন। এমনকি তাকে চাকুরীচ্যুতির নোটিশ দেওয়া হয়। এর বিরুদ্ধে তিনি উচ্চ আদালতে মামলা করেন এবং জয়লাভ করেন। ২০০৭ সালে তিনি উপসচিব হিসাবে পদোন্নতি পান এবং তাকে পদায়ন করা হয়। ২০০৯ সালের প্রথমদিকে আওয়ামীলীগ সকরার তাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করেন। ২০১৪ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত ছিলেন। ২০১৪ সালের আগষ্ট মাসে তিনি জ্বালানী বিভাগে বদলী হন। ২০১৫ সালের শেষার্ধে তাকে জ্বালানী বিভাগের সচিব হিসাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এই মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী স্বয়ং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তিনি দক্ষতা, যোগ্যতা ও নিষ্ঠার সাথে তার দায়িত্ব পালন করেন। এর স্বীকৃতি স্বরূপ সরকার তার চাকুরীর মেয়াদও বর্ধিত করেন। কাজেই বিএনপি সরকারের নিকট আনুকুল্য প্রাপ্তির সংবাদ সম্পূর্ণ বানোয়াট।
তিনি উত্তরাধীকারী সূত্রে ঢাকায় একাধিক বাড়ী, বরিশালে বাড়ী, ভোলায় বাড়ী, মনপুরায় অনেক কৃষি জমি এবং পটুয়াখালীতেও অনেক কৃষি জমি পেয়েছেন। এসকল সম্পত্তি অধিকাংশই তার জন্মের পূর্বে বা তার বাল্য জীবনে তার পিতামাতা ক্রয় করেছেন। এসকল সম্পত্তি হতে প্রাপ্ত আয় এবং কিছু সম্পত্তি বিক্রি করার অর্থ, নিজ কৃষি ও পশুপালন খামারের আয়, অবসর সুবিধার অর্থ থেকে নিজে ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে যে সম্পত্তি ক্রয় করা হয়েছে তা সম্পূর্ণই তার জ্ঞাত আয়ের অন্তর্গত। তার বিরুদ্ধে এ সকল মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে এই প্রতিবেদককে প্রভাবিত করেছে বলেই মনে হয়।
এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ ক্যূটিং স্পোর্ট ফেডারেশনের সভাপতি, বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের সহ- সভাপতি এবং বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক কাজে সম্পৃক্ত। তার প্রতি ঈর্ষান্বীত হয়ে হয়ত কোন কুচক্রী ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ এ ধরনের মিথ্যা সংবাদ পরিবেশনে মদদ দিয়েছে।