• ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভোলার ছেলে সালাহ্উদ্দিন রিফাতের ৩৬ তম বিসিএস এ পুলিশ ক্যাডারে প্রথম হওয়া গল্প

দখিনের সময়
প্রকাশিত জুলাই ৩০, ২০২১, ০০:২৪ পূর্বাহ্ণ
ভোলার ছেলে সালাহ্উদ্দিন রিফাতের ৩৬ তম বিসিএস এ পুলিশ ক্যাডারে প্রথম হওয়া গল্প

মো: সালাহ্উদ্দিন (রিফাত)

সংবাদটি শেয়ার করুন...

৩৬ তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে প্রথম হয়েছিলেন দ্বীপজেলা ভোলার ছেলে মো: সালাহ্উদ্দিন (রিফাত)। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক-লালবাগ বিভাগে সহকারী পুলিশ কমিশনার (ফুলবাড়িয়া ট্রাফিক জোন) হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি তার বিসিএস জয়, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন এবং সফলতার গল্প শুনিয়েছেন দৈনিক দখিনের সময়কে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কাজী হাফিজ।

 ১. আপনার শিক্ষাজীবনের গল্প শুনতে চাচ্ছিলাম ?

২০০৬ সালে ভোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০০৮ সালে ভোলা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করি। উভয় পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হই। এরপর ২০০৮-০৯ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে ভর্তি হই। কিন্তু এসএসসি ও এইচএসসি তে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ছাত্র থাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় অনুষদে ভর্তির প্রবল ইচ্ছা ছিল। পরবর্তী চেষ্টায় সফল হয়ে হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগে ভর্তি হই। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করি। বিবিএ তে সিজিপিএ ৩.৬৩ ও এমবিএ তে ৩.৭৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হই।

২. একজন বিসিএস ক্যাডার হিসেবে নিজেকে দেখার স্বপ্নটা আপনার মধ্যে কখন এবং কিভাবে জাগ্রত হলো?

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় সময় স্বপ্ন ছিল চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট হওয়ার।  তাই বিবিএ ও এমবিএ তে নিজের বিভাগের পড়াকেই গুরুত্ব দিয়েছিলাম। এমবিএ শেষ করেই নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুত সমিতিতে সহকারী মহাব্যবস্থাপক পদে  যোগদান করি। কিন্তু বন্ধুদের বিসিএসে যোগ দিতে দেখে পল্লী বিদ্যুতের চাকরি ছেড়ে প্রস্তুতি শুরু করলাম বিসিএস পরীক্ষার।

৩.আপনি কীভাবে বিসিএস এর প্রস্তুতি নিয়েছিলেন?

প্রথমেই পুরো বিসিএসের সিলেবাসটি ভালো করে পর্যালোচনা করে নেই। বিশ্ববিদ্যালয় এবং নিজ আবাসিক হলের যেসব ভাইয়েরা বিসিএসে ভালো করেছে তাদের থেকে পরামর্শ নেই। তারপর বন্ধুদের নিয়ে একটা স্টাডি গ্রুপ তৈরি করি। যে যেই বিষয়ে পারদর্শী ছিল সে সেই বিষয়ে অন্যদের সহযোগিতা করত। মাঝে মাঝে নির্দিষ্ট একটা বিষয় নিয়ে সবাই আলোচনা করতাম। যেসব বিষয়ে বেশি নাম্বার অর্জন করা সম্ভব যেমন ইংরেজী, গণিত ও বিজ্ঞান সেসব বিষয় গুরুত্ব সহকারে পড়েছি। প্রতিদিনের পড়া ভাগ করে প্রতিদিন শেষ করতাম।

আমি সব সময় আউটপুট ভিত্তিক পড়ালেখা করেছি। একসাথে সব বিষয় না পড়ে যতটুকু পড়েছি গুছিয়ে পড়েছি। প্রতিদিন সময় নির্ধারণ করে  নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে প্রস্তুতি গ্রহণ করতাম ।

৩৬ তম বিসিএসে ভালোভাবে প্রস্ততি নিয়ে অংশগ্রহণ করি। প্রিলি ও রিটেনে উত্তীর্ণ হয়ে ভাইভায় অংশগ্রহণ করি। ৩৬তম বিসিএস ভাইভায় অংশগ্রহণের পরের দিনই পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনে সহকারী ব্যবস্থাপক পদে চাকরিতে যোগ দেই।পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনে চাকরিরত থাকা অবস্থায় বিসিএস এর চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ হলে দেখি পুলিশ ক্যাডারে প্রথম হয়ে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছি। নিজেকে খুব মেধাবী ছাত্র হিসেবে কখনই বিবেচনা করতাম না।  আমি বিশ্বাস করি আমার মা-বাবার দোয়া, উৎসাহ আর সহপাঠী বন্ধুদের আন্তরিক সহযোগিতা ও নিজের কঠোর পরিশ্রম আমাকে এ শীর্ষ চূড়ায় পৌঁছে দিয়েছে।

৪. পুলিশের মৌলিক প্রশিক্ষণে বেস্ট প্রবেশনার হবার পর আপনার অনুভুতি কেমন ছিলো?

বেস্ট প্রবেশনার হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নিয়েছি, এটা অনেক সম্মান ও গৌরবের। এটি আমার জীবনের অন্যতম স্বরণীয় একটি দিন। তবে এ বিষয়ে আমার ব্যাচমেট এবং পুলিশ একাডেমির সম্মানিত অনুষদবৃন্দ ও প্রিয় প্রশিক্ষকবৃন্দ আমাকে অনেক অনুপ্রেরণা দিয়েছে, সহযোগিতা করেছে। এজন্য তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।

৫.বিসিএস পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আপনার   পরামর্শ?

যে বিষয়টিতে আপনার দুর্বলতা আছে সবার আগে সেটি কাটিয়ে উঠতে হবে। বিসিএস একটি সাধনা। এ পথে যাত্রা শুরুর পূর্বেই নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করে নিতে হবে। বিসিএস এর প্রতিটি ধাপের জন্য পিএসসির সিলেবাস রয়েছে, রয়েছে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা। প্রথমেই এসব বিষয় ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। এরপর সে অনুযায়ী নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। বিশেষ করে ইংরেজী ও গণিত বিষয়ে মৌলিক পড়াগুলো ভালো করে আয়ত্ত্ব করতে হবে। তারপর নিয়মিতভাবে বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনা এগিয়ে নিতে হবে। লিখিত পরীক্ষার জন্য হাতের লেখাকে অনেক গুরুত্ব দিতে হবে। বিভিন্ন তথ্য, গ্রাফ, মানচিত্র, কোটেশন উত্তরপত্রে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে হবে। বিসিএসে সফল হওয়ার জন্য নিজের প্রতি আত্নবিশ্বাস সবচেয়ে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তবে একটি পরিকল্পিত ও গোছানো প্রস্তুতি আত্নবিশ্বাস বৃদ্ধি করে চূড়ান্ত সফলতা এনে দিতে পারে।