Home অন্যান্য অপরাধ ও দূর্নীতি মতিঝিল আইডিয়াল কোটিপতি কর্মচারী আতিক, ছয় বছরে ব্যাংকে ১১০ কোটি টাকা লেনদেন

মতিঝিল আইডিয়াল কোটিপতি কর্মচারী আতিক, ছয় বছরে ব্যাংকে ১১০ কোটি টাকা লেনদেন

দখিনেরর সময় ডেস্ক:

রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আতিকুর রহমান খান তৃতীয় শ্রেনীর কর্কর্া। কিন্তু তিনি প্রভাবশালী ও কোটিপতি। ১৫টি ব্যাংকে তার ৯৭টি অ্যাকাউন্টে মাত্র ছয় বছরে ১১০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে।

অভিভাবকদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আতিকের সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের আবেদনে আতিকুর রহমানের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন আদালত। রবিবার(৮আগস্ট) ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কেএম ইমরুল কায়েশ এ আদেশ দেন। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ড. ডক্টর শাহান আরা বেগম, দুজন শিক্ষক ও গভর্নিং বডির সাবেক একজন সদস্যের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক।

রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আতিকুর রহমান খান। তৃতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা হলেও তার দাপটে তটস্থ থাকতেন শিক্ষকরা। অভিযোগ আছে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষের সঙ্গে যোগসাজশে দুর্নীতির মাধ্যমে আয় করেছেন অঢেল টাকা। পদ না থাকলেও নিয়মবহির্ভূতভাবে প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদ তৈরি করে নিয়োগ দেওয়া হয় তাকে। এর পর কলেজটির নিয়ন্ত্রণ নেন আতিক।

 আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অন্যান্য ব্যক্তির যোগসাজশে শিক্ষার্থী ভর্তির বিনিময়ে বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান চলমান রয়েছে মর্মে আদালতে আবেদন করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মাহবুবুল আলম। অনুসন্ধানী এ কর্মকর্তা তার আবেদনে আরও উল্লেখ করেন, আতিকুর রহমানের নামে সাউথইস্ট ব্যাংকে ২৬টি, প্রাইম ব্যাংকে ২৯টি, ঢাকা ব্যাংকে ১০টি, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকে ১০টি, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকে ৩টিসহ মোট ১৫টি ব্যাংকে ৯৭টি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এসব অ্যাকাউন্টে গত ছয় বছরে ১১০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে।

ব্যাংকে নগদ অর্ ছাড়াও বনশ্রীর মসজিদ মার্কেটের সঙ্গে তার বিশাল বইয়ের দোকান আছে, আফতাবনগর বি ব্লকের ৩৪নং প্লটটিতে সুপারশপ রয়েছে, ভিশন-৭১ নামে তার আছে রিয়েল এস্টেট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আফতাবনগর ও বনশ্রীতে আতিকুরের বাড়ি রয়েছে ৫টি। যা তার জ্ঞাত আয়ের উৎসবহির্ভূত সম্পদ এবং দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারায় ও মানিলন্ডারিং প্রতিরােধ আইন, ২০১২ ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই অভিযুক্ত ব্যক্তি বিদেশে পালিয়ে গেলে অনুসন্ধান কার্যক্রম দীর্ঘায়িত বা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

জানা গেছে, আতিকুর রহমান ২০০৪ সালে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে উপসহকারী প্রকৌশলী পদে যোগদান করেন। ২০১৫ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবেও অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন তিনি। অথচ এমপিওভুক্ত উচ্চমাধ্যমিক কলেজে প্রশাসনিক কর্মকর্তার কোনো পদ নেই। অবৈধভাবে এ পদ সৃষ্টি করে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে অবৈধ ভর্তিসহ সব বাণিজ্যের হোতা ছিলেন এ আতিক।

প্রতিষ্ঠানের তিনটি ক্যাম্পাসের প্রায় ২৭ হাজার শিক্ষার্থীর ইউনিফর্ম, ক্যান্টিন, লাইব্রেরি সবই ছিল বেনামে তার নিয়ন্ত্রণে। এমনকি স্কুলের সামনে ফুটপাতে শতাধিক দোকান বসিয়েও তিনি আয় করেন মোটা অঙ্কের টাকা। আবার প্রতিষ্ঠানে যত ধরনের কেনাকাটা, উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ হয় তার সবই করেন আতিক। দরপত্রেও অংশ নেয় নামে-বেনামে তারই প্রতিষ্ঠান। সেখানে চলে বড় ধরনের লুটপাট। গত ১২ বছরে প্রতিষ্ঠানে পাঁচশতাধিক শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ আছে, বেশিরভাগ শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে পাঁচ থেকে ১০ লাখ টাকা এবং কর্মচারী নিয়োগে দুই থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে। যার বেশিরভাগই হয়েছে আতিকের মাধ্যমে।

এর আগে শিশু পরীক্ষার্থীর খাতার ভুল উত্তর রাবার দিয়ে মুছে শুদ্ধ উত্তর লিখে নম্বর বাড়িয়ে নিজেদের পছন্দ মতো ১০০-এর বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর অভিযোগ ওঠে আইডিয়াল স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে অভিভাবকদের দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছিল, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা, প্রধান শিক্ষক আবদুস ছালাম খান, অফিস সহকারী দীপাসহ কিছু কর্মচারী ২০১৮ সালের দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষার উত্তরপত্রে ঘষামাজা করে ভুল উত্তর রাবার দিয়ে মুছে সেখানে শুদ্ধ উত্তর লিখে ফেল করা শিক্ষার্থীদের পাস করিয়ে দিয়েছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

নিজের চেয়ার ঠিক রাখতেই ব্যস্ত পুলিশ কর্মকর্তারা

দখিনের সময় ডেস্ক: জুলাই ২৪-এর আন্দোলনে গণহত্যার জন্য একক বাহিনী হিসেবে পুলিশকে দায়ী করা হয়। মানুষের ক্ষোভের আগুনে পুড়েছে বাহিনীটির শতশত থানা, যানবাহন। জীবন গেছে...

সংস্কারের আগে নির্বাচন করলে কখনোই সংস্কার হবে না: তোফায়েল

দখিনের সময় ডেস্ক: সংস্কারের আগে নির্বাচন করলে আর কখনোই সংস্কার হবে না। জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় এ মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন সদস্য...

না ভোট ফিরিয়ে আনার সুপারিশ সংস্কার কমিশনের

দখিনের সময় ডেস্ক: সরাসরি রাষ্ট্রপতির নির্বাচন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কোনো প্রার্থী নির্বাচিত না হওয়া, না ভোট ফিরিয়ে আনা ও অর্থের উৎসের স্বচ্ছতা নিশ্চিতসহ বেশ কয়েকটি সুপারিশ...

সুযোগ পেলে গলা চেপে ধরবে আ.লীগ: রিজভী

দখিনের সময় ডেস্ক: গণহত্যার জন্য বর্তমানে আওয়ামী লীগ ক্ষমা চাওয়ার কথা বললেও, সুযোগ পেলে আবারও তারা মানুষের গলা চেপে ধরবে। এমনটাই মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র...

Recent Comments