Home সারাদেশ ঝালকাঠিতে অসুস্থ দুই শিশুকে রাস্তায় ফেলে গেলেন মা

ঝালকাঠিতে অসুস্থ দুই শিশুকে রাস্তায় ফেলে গেলেন মা

ইমাম বিমান।।

ঝালকাঠিতে স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য কলহের জেরে বিবাহ বিচ্ছেদের কারনে মায়ের কাছে থাকা দেড় বছরের জমজ দুই শিশু সন্তানকে রাস্তায় ফেলে রেখে চলে যান গর্ভধারিনী মা। গত ১৯ সেপ্টেম্বর বিকেলে ঝালকাঠি জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে মা তার দুই সন্তানদের রেখে চলে যান।

বিষয়টি স্থানীয় পত্রিকা ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেনের পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে সড়কে শিশু দুটিকে পড়ে থাকতে দেখে তাদের পাশে ছুটে যান।

পরে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের নিরাপত্তারক্ষীর কক্ষে নিয়ে কাগজ বিছিয়ে তাদেরকে সেখানে বসিয়ে দেন।

এ বিষয় পত্রিকা ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেনের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, এসপি অফিসের সামনের সড়কে শিশু দুটিকে পড়ে থাকতে দেখে তাদের কাছে ছুটে যাই। সেখানে দাড়িয়ে কিছুক্ষন অপেক্ষা করতে থাকি যে বাচ্চার কোন আত্মীয়-স্বজন আচে কিনা ? স্থানীয় ও পথচারিদের জিজ্ঞেস করলাম কেউ তাদের পরিচয় বলতে পারছেনা। একটি বাচ্চার হাতে কেনলা পড়ানো দেখে বুঝতে পারলাম তারা অসুস্থ। আমি তাদেরকে সেখান থেকে কোলে তিলে নিয়ে এসপি অফিসের গার্ডের রুমে নিয়ে গেলাম এবং পেপার বিছিয়ে বসিয়ে দিলাম। একই সাথে তাদের যৌথ ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে আমার ব্যক্তিগত প্রফাইলে পোষ্ট করলাম। পোষ্ট করার ৩/৪ মিনিটের মধ্যে স্থানীয় সাংবাদিকরা এসে বিষয়টি নিয়ে পরিবারের সন্ধান চেয়ে পোষ্ট দেয়। অপরদিকে বিষয়টি পুলিশের নজরে আসলে থানা পুলিশ এসে সাংবাদিক মনির হোসেন ও অক্সিজেন যোদ্ধা রায়হানের সহযোগীতায় বাচ্চা দুটিকে থানায় তাদের হেফাজতে নিয়ে যায়।

এ বিষয় থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আরাফ ও আয়ান নামের ১৬ মাসের যমজ শিশু দুটির বাবা ইমরান হোসেন কাঁঠালিয়া থানায় পুলিশ কনস্টেবল পদে কর্মরত আছেন। তিনি বর্তমানে এক মাসের প্রশিক্ষণের জন্য জামালপুরে অবস্থান করছেন। তার বাড়ি বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার মালুহার গ্রামে। ২০১৯ সালের মে মাসে সদরের খাওক্ষির গ্রামের সুমাইয়া আক্তারের সঙ্গে বিয়ে হয় কনস্টেবল ইমরানের। দাম্পত্য কলহের জেরে এ বছরের মার্চ মাসে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। বিচ্ছেদের সময়ের সিদ্ধান্ত মতে শিশু দুটির ভরণপোষণের জন্য পুলিশ কনস্টেবল ইমরান প্রতি মাসে ৩ হাজার টাকা দেবেন। কিন্তু শিশু দুটির মা সুমাইয়ার দাবি, বিবাহবিচ্ছেদের পর থেকে তার সন্তানদের কোনো ভরণপোষণ দিচ্ছেন না ইমরান। বিকেলে পুলিশ সুপার কার্যালয় এর সামনে থেকে ঝালকাঠি সদর থানায় শিশু দুটিকে নিয়ে যাওয়া হয়।

এ বিষয় শিশুদুটির মা সুমাইয়া আক্তারের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, ১২ সেপ্টেম্বর থেকে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শিশু আরাফ ও আয়ান ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ভর্তি আছে। রোববার সকালে চিকিৎসকরা শিশু দুটির বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করাতে বলেন। এতে প্রায় ৬ হাজার টাকার প্রয়োজন ছিল। বিষয়টি ইমরানকে জানানো হলেও তিনি টাকা দিতে অপরগতা প্রকাশ করেন। এমনকি বিচ্ছেদের পর একবারের জন্যও তার সন্তানদের খোঁজ নেননি তিনি। তাই বাধ্য হয়ে শিশু দুটিকে নিয়ে পুলিশ সুপার ফাতিহা ইয়াসমিনের সাক্ষাতের জন্য যাই। কিন্তু প্রধান ফটকের সামনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ইমরান মিয়া ও মো. সুমন নামে দুই পুলিশ সদস্য ভেতরে প্রবেশ করতে দেননি। তাই বাধ্য হয়ে শিশুসন্তানদের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে রেখে চলে এসেছি বলে জানান তিনি।

অপরদিকে শিশুদুটির বাবা পুলিশ কনস্টেবল ইমরানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, গত বছর আনুমানিক ছয়মাস আমি ভোলা পুলিশ লাইনে কর্মরত ছিলাম।  সেখানে আমি থাকাকালিন অবস্থায় আমার স্ত্রী আমার বিরুদ্ধে পুলিশ সুপারের কাছে মৌখিক ভাবে অভিযোগ করে পুলিশ সুপার মহদ্বয়ের কাছে অামার বিরুদ্ধে আমার স্ত্রী করা অভিযোগ মিথ্যে প্রমানিত হওয়ায় এবং তার আচরন খারাপ থাকায় আইনের মাধ্যমে তাকে সন্তানসহ জেলে প্রেরন করেন। সেখান থেকেও আমার শশুরের সাথে কথা বলে আমি তাকে ছাড়িয়ে এনে শশুর বাড়ীতে রেখেছি।  কিছুদিন সেখানে থাকার পর আমার স্ত্রী আমাকে মুঠো ফোনে জানায় তার বাবা,মা ও ভাই মিলে আমার সন্তানদের নিয়ে মেরে ফেলতে চাইছে। আমি তার ভাইয়ের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন তার বোন আমার স্ত্রীকে তার ছোট বাচ্চাদেরকে মারধর করতেছে দেখে তারা বাচ্চাদের বাঁচাতে তাদের কাছে নিয়েছে বলে জানায়।  শুধু তাই নয় আমার স্ত্রী ত্রিপল নাইনে ফোন দিয়ে আমার সাথে যা বলেছে তাদের সাথেও একই কথা বলে তার বাবার বাড়ীতে পুলিশ আনায়। বিষয়টি নলছিটি থানার ওসি জানতে পেরে আমাদের উভয় পক্ষের কাছ থেকে এহন কাজ করবোনা বলে মুছলেকা নেয়। তার সাথে আমার বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ার পর থেকে আমি

প্রতি মাসে শিশু দুটির ভরণপোষণের জন্য ৩ হাজার টাকা সুমাইয়ার ব্যাংক হিসেবে পাঠিয়ে দিচ্ছি। আমি আমার সাধ্য অনুযায়ী তাদের খোঁজখবর নেই। কিন্তু মা হয়ে তিনি কীভাবে সন্তানদের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে ফেলে গেলেন ?

ঝালকাঠি সদর থানায় গিয়ে দেখা যায়, শিশু দুটির কান্নায় থানার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। নারী ও শিশু হেল্প ডেস্কের এক নারী কনস্টেবল শিশু দুটিকে সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এ সময় শিশু দুটির শরীরের তাপমত্রা ছিল অনেক বেশি। এ বিষয় ঝালকাঠি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খলিলুর রহমান বলেন, আমরা বিষয়টি পারিবারিক ভাবে মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করছি। শিশুদের দাদা-দাদিকে খবর দেওয়া হয়েছে।  রাত দশটার সময় শিশুদের দাদি থানায় আসলে দাদির হাতে শিশুদের তুলে দেওয়া হয় ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

প্রতিদিন কলা খাওয়ার উপকার

দখিনের সময় ডেস্ক: প্রতিদিন কলা খেলে মেলে অনেক উপকার। কলায় থাকে প্রয়োজনীয় অনেক ভিটামিন। যে কারণে চিকিৎসকেরা নিয়মিত কলা খাওয়ার পরামর্শ দেন। প্রতিদিন অন্তত দুটি...

মোহিনীর প্রেমের এআর রহমানের বিচ্ছেদ, যা বলছেন পুত্র

দখিনের সময় ডেস্ক: ব্যক্তিজীবন নিয়ে সংবাদের শিরোনামে এআর রহমান। সায়রা বানুর সঙ্গে দীর্ঘ ২৯ বছরের দাম্পত্যের অবসান। বুধবার রাতে রহমানের স্ত্রী সায়রার আইনজীবী এই খবর...

স্মার্টফোনে ইন্টারনেট চলে যাচ্ছে? জেনে নিন গতি বাড়ানোর কৌশল!

দখিনের সময় ডেস্ক: অনেকেই মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় হঠাৎ করেই দেখেন, নেটওয়ার্ক চলে গেছে। আশেপাশের অন্যরা নির্বিঘ্নে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারলেও আপনার ফোনেই সমস্যা...

প্রতিদিন ৩-৪ লিটার পানি পান করলে কী হয়?

দখিনের সময় ডেস্ক: ওজন কমানো একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ হতে পারে। কঠোর ডায়েট অনুসরণ করা, খাবারের প্রতি লোভ নিয়ন্ত্রণ করা, প্রতিদিন জিমে যাওয়া, কঠোর ওয়ার্কআউট করা...

Recent Comments