Home শীর্ষ খবর আইনে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন: এডভোকেট জাহাঙ্গীর

আইনে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন: এডভোকেট জাহাঙ্গীর

আলম রায়হান:

বিশিষ্ট আইনজীবি এবং বরিশালে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এ কে এম জাহাঙ্গীর মনে করেন, সময়ের প্রয়োজনে আইনে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। এ বিচার প্রসঙ্গে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক উক্তিটি স্মরণ করেন দৈনিক দখিনের সময়- এর সঙ্গে আলাপকালে। এ সময় এ কে এম জাহাঙ্গীর কতিপয় আইনজীবির পেশাগত নৈতিকতা নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আইন পেশা ছিলো রাজকীয় পেশা, যেখানে অর্থের বিষয়টি মুখ্য ছিলো না। কিন্তু কালের আবর্তে অনেক অইনজীবির কাছে যেনো অর্থ উপার্জন মূল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রাজনীতিক ও আইনজীবি এ কে এম জাহাঙ্গীর সমধিক পরিচিত ভিপি জাহাঙ্গীর হিসেবেই। বরিশাল কলেজের দুইদুবার ভিপি নির্বাচিত হয়ে রেকর্ড সৃষ্টি করা কেবল নয়, ছাত্র জীবন থেকে শুরু করে রাজনীতির দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে বর্তমানে তিনি বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। তার কোন প্রাপ্তিই পারিবারিক সংযোগ অথবা দৈবক্রমে হয়নি। বরং তার রাজনৈতিক ও পেশাগত জীবনের বিকাশ ঘটেছে নানান চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে। ‘সেল্ফমেইড ম্যান’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত এ কে এম জাহাঙ্গীর রাজনীতির বর্তমান অবস্থানে পৌঁছেছেন অন্তত ৪০ বছরের পরিশ্রম এবং দক্ষিণ বঙ্গের রাজনীতির প্রধান পুরুষ আবুল হাসানাত আবদুল্লার আস্থা অর্জনের মাধ্যমে।

দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে এ কে এম জাহাঙ্গীরকে অন্য কোন নেতার দুয়ারে বা পিছনের দরজায় দেখেনি কেউ। রাজনীতিতে তিনি দক্ষিণ বঙ্গের সিংহ পুরুষ আবুল হাসানাত নির্ভর। তার মাথার উপর সার্বক্ষনিক নেতা হিসেবে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ একক নেতা ও মুরব্বী হিসেবে বিরাজমান- এমনটাই মনে করেন তিনি। তার অনুভব, পিতার রাজনীতির ধারা ধারণ করেই সফলভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ।

রাজনীতির মতোই পেশাগত জীবনেও এ কে এম জাহাঙ্গীর ‘একক গুরু’ নির্ভর। আইন বিদ্যায় ডিগ্রী লাভের পর তিনি পেশাগত সনদ লাভ করেন ১৯৯১ সালে। এরপর পেশায় নিয়োজিত হয় ৯২ সালে। এডভোকেড দিলীপ কুমার ঘোষের সঙ্গে অল্প কিছুদিন সংযুক্ত থাকার পর তিনি সংযুক্ত হন এডভোকেড গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলালের সঙ্গে। দুলাল চৌধুরীকেই তিনি পেশাগত গুরু মানেন। যাকে তিনি বিবেচনা করেন আইন পেশার কিংবদন্তি নেতা হিসেবে। এ কে এম জাহাঙ্গীর জানান, আইন পেশায় অনেকেরই হাতে খড়ি হয়েছে গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলালের মাধ্যমে। গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলালের অনেক শিষ্য আছে, যাদের মধ্যে অনেকেই পেশা এবং পেশাগত নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন বলে জানালেন এ কে এম জাহাঙ্গীর।

এ কে এম জাহাঙ্গীর ২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর থেকে বরিশার জেলার প্রধান আইন কর্মকর্তা (পিপি) হিসেবে সুনাম ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। পেশাগত পরিচয়ে তিনি গর্বিত। কিন্তু তাঁর মনের গহিনে এক ধরনের অশ্বস্তি বোধ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি স্মরণ করেন ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি উক্তি। যেখানে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, উকিল সাহেবের কাছে কোন মামলা এলে তা জামাই থেকে নাতী পর্যন্ত পৌঁছায়, কিন্তু মামলা আর শেষ হয় না!

এ কে এম জাহাঙ্গীর মনে করেন ‘৭৪ সালে বিচার ব্যবস্থার যে দিকটি বঙ্গবন্ধু ক্ষোভের সঙ্গে উল্লেখ করেছিলেন সেই অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব হয়নি। বরং কোন কোন ক্ষেত্রে অবস্থার অবনতি ঘটেছে। তিনি বলেন, দেড় বছরের মধ্যে ভূমি সংক্রান্ত মামলা নিষ্পিতির কথা বলেছিলেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু এ মামলা চলছে যুগের পর যুগ। ফৌজদারী মামলাও দ্রুত নিষ্পত্তি করার উপর জোর দিয়েছিলেন জাতির পিতা। কিন্তু তাও হচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে এ কে এম জাহাঙ্গীর বলেন, সমাজের প্রভাবশারী ও ধনবানরা মানুষের জমি দখল করে নিয়ে মামলার জালে ফাঁসিয়ে দেয়। এই জাল ছিড়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাধারণ মানুষ আর বের হতে পারে না।

পিপি জাহাঙ্গীর বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর যেই অপশক্তি একটানা দীর্ঘ ২১ বছর ক্ষমতা আকড়ে ছিলো তাদের পৃষ্ঠপোষকতায়ই বিভিন্ন সেক্টরে নানান অপশক্তি গজিয়েছে। এদের পৃষ্ঠপোষকতায়ই অনেক ক্ষেত্রে বিষ বৃক্ষ গজিয়েছে। এরা বিচার অঙ্গনেই প্রভাব ফেলেছে। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই মানুষ প্রত্যাশিত বিচার থেকে বঞ্চিত হবার অভিযোগ উঠছে। এদের কারণে অনেক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ফৌজদারী বিষয়ে বিচারের জন্য বিভাগীয় পর্যায়ে বিশেষ ট্রাইবুনাল স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছিলো। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি।

মামলা জট এবং দীর্ঘ সূত্রিতা বিষয়ে নিজের পেশার একশ্রেনীর আইনজীবির দায়িত্বের কথাও উল্লেখ্য করেন এ কে এম জাহাঙ্গীর। তিনি বলেন, ভূমি সংক্রান্ত ও ফৌজদারী মামলায় অনেক ক্ষেত্রে আমরা আইনজীবিরাও সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছি না। আইন পেশায় আমরা যারা আছি তাদের নীতি-নৈতিকতা অনেক ক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। মামলার নিষ্পত্তিতে অনেকেরই সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। এক সময় ছিলো, যখন আইন পেশাকে রাজকীয় পেশা হিসেবে বিবেচনা করা হতো। সেখানে অর্থ আয়ের বিষয়টি প্রাধান্য পায়নি। কিন্তু অনেকের কাছেই অর্থ আয় প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে! যা বাঞ্চনীয় নয়।

অপর এক প্রসঙ্গে বরিশালে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এ কে এম জাহাঙ্গীর বলেন, পুলিশের নীতি-নৈতিকতা ও দক্ষতার অধিকতর উন্নয়ন এবং উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের গভীর পর্যবেক্ষণের ফলে থানায় মিথ্যা মামলা দায়ের করার সুযোগ অনেকটাই সংকোচিত হয়েগেছে। ফলে এক শ্রেণীর মামলাবাজ আইনের বিধানের ধারার অপব্যবহার করে ফৌজদারী অভিযোগেও সরাসরি আদালতের স্মরনাপন্ন হচ্ছেন। তিনি বলেন, এক শ্রেনীর মামলাবাজ নিরীহ ব্যক্তিদের সাময়িক হয়রানী করতে পারলেও চূড়ান্ত বিচারে মিথ্যা অভিযোগকারীরই পরাজয় ঘটে। পিপি এ কে এম জাহাঙ্গীর বলেন, মিথ্যা মামলা দিয়ে সাময়িক হয়রানীর ধারাও বন্ধ করা প্রয়োজন। এ জন্য আইনের সংশোধনের উপর গুরুত্বারোপ করেন রাষ্ট্রের এই আইন কর্মকর্তা এ কে এম জাহাঙ্গীর বলেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেশনাল এমবিএ প্রোগ্রাম চালু

কাজী হাফিজ: বর্তমান বিশ্বে মাস্টার্স অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন (এমবিএ) প্রোগ্রামকে ব্যবসা এবং ব্যবস্থাপনার সর্বোচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন কোর্স হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের চাহিদার কথা...

গাড়িতে আসার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিলেন রনোভাই

প্রায় দুই দশক আগে এসটিভি ইউএস নামে একটি টেলিভিশন আমেরিকা থেকে সম্প্রচারিত হতো। কিন্তু কার্যক্রম পরিচালিত হতো বাংলাদেশ থেকে। এতে মুখোমুখি নামে একটি টকশো...

মাছ ধরার সময় শ্বাসনালিতে বাইন মাছ

দখিনের সময় ডেস্ক: ঝুঁকিপূর্ণ দেখে তিন ঘণ্টার চেষ্টায় শ্বাসনালি কেটে বাইন মাছটি বের করা হয়। এরপর রোগী সুস্থ হলে ৭-৮ দিন পর তার শ্বাসনালিতে বসানো...

অধ্যক্ষের রুমে ঢুকে শিক্ষক পেটানো সেই ছাত্রলীগ নেতা বহিষ্কার

দখিনের সময় ডেস্ক: কলেজে অধ্যক্ষের রুমে ঢুকে শিক্ষক পেটানো ছাত্রলীগ নেতাকে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। শিক্ষককে পেটানো বহিষ্কৃত এ ছাত্রলীগ নেতা হলেন মো. সাফাতুন নুর...

Recent Comments