Home খেলাধূলা সুপার ফোরে শ্রীলঙ্কা, হৃদয় ভাঙল আফগানিস্তানের

সুপার ফোরে শ্রীলঙ্কা, হৃদয় ভাঙল আফগানিস্তানের

দখিনের সময় ডেস্ক:
আফগানিস্তানের ড্রেসিংরুম কি হিসাবটা জানত না? ড্রেসিংরুম থেকে কি শেষ উইকেট জুটিতে ক্রিজে থাকা দুই ব্যাটসম্যানের কাছে কোনো বার্তা যায়নি? প্রশ্নগুলো উঠছে আজ লাহোরে পরতে পরতে উত্তেজনা ছড়ানো ম্যাচটির শেষ অঙ্কের পর।
যে রোমাঞ্চ ছড়িয়ে আজ লাহোরে আফগানিস্তানকে ২ রানে হারিয়ে এশিয়া কাপের সুপার ফোরে চলে গেল শ্রীলঙ্কা, তাতে সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম সেরা ম্যাচের স্বীকৃতিই দাবি করতে পারে ম্যাচটি। শ্রীলঙ্কা আগে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে করেছে ২৯১ রান, তবে আফগানিস্তানের জন্য ৫০ ওভারের হিসেব-নিকেশের সুযোগই ছিল না। আফগান ইনিংসের শুরুতে জানা গেল, বাংলাদেশের কাছে আগের ম্যাচে ৮৯ রানে হেরে যাওয়ায় আফগানিস্তানকে আজ এ রান তাড়া করতে হবে ৩৭.১ ওভারে। কিন্তু ৩৮তম ওভারের প্রথম বলে দলকে ২৮৯ রানে রেখে নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে মুজিব আউট হওয়ার সময় জানা গেল নতুন হিসাব, আফগানিস্তান পরের তিন বলের মধ্যে ২৯৫ রানে পৌঁছাতে পারলে শ্রীলঙ্কা নয়, সুপার ফোরে যাবে আফগানিস্তান!
কিন্তু আফগান ড্রেসিংরুমে যেন তখন এ অঙ্ক হিসাব করার কেউ নেই! পুরো ড্রেসিংরুম মুজিব আউট হওয়ার সময়ই ভেঙে পড়েছে। ওদিকে রশিদ খান নন-স্ট্রাইকে, শেষ ব্যাটসম্যান ফারুকি পরের দুই বলে রান নেয়ার কোনো চেষ্টাই করলেন না। এ কারণেই প্রশ্নটা জাগছে, শেষদিকে হঠাৎ বদলে যাওয়া সমীকরণ কি আফগান ড্রেসিংরুমে কেউ জানত না?
শেষ পর্যন্ত ৩৮তম ওভারের চতুর্থ বলে এলবিডাব্লিউই হয়ে গেলেন ফারুকি। ২৮৯ রানেই অলআউট আফগানিস্তান! চোখধাঁধানো লড়াইয়ের পরও একেবারে শেষে গিয়ে পথ হারিয়ে ফেলল আফগানরা। বাংলাদেশের সঙ্গী হয়ে সুপার ফোরে চলে গেল শ্রীলঙ্কা।
এমন রানতাড়ায় শুরুটা যেমন হওয়ার দরকার ছিল, আফগানিস্তানের শুরুটা হলো ঠিক এর উল্টো। তৃতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে গুরবাজ ফিরলেন, পঞ্চম ওভারের শেষ বলে আউট ইব্রাহিম জাদরানও। ২৭ রানে দুই ওপেনারের বিদায়! এর কিছুক্ষণ পর দলকে ৫০ রানে রেখে বিদায় গুলবদীন নাইবেরও। সেখান থেকে আফগানিস্তান যে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, তার কৃতিত্ব এর পরে নামা সব ব্যাটসম্যানেরই, তবে আলাদা করে বলতে হবে দুজনের কথা – মোহাম্মদ নবী ও অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহীদি।
দুজনের দুটি ইনিংসে একেবারে ১৮০ ডিগ্রি ব্যবধান। নবী ৬৫ রান করেছেন ৩২ বলে, ৬ চার আর ৫ বিশাল ছক্কায়। বলতে গেলে আফগানিস্তানকে জয়ের পথে তুলে দিয়েছে চোখধাঁধানো ইনিংসটিই। শহীদি অন্যদিকে ৬৬ বলে ৫৯ রানের ইনিংসে ‘অ্যাঙ্করিং’ করে গেছেন, দারুণ সঙ্গ দিয়ে গেছেন নবীকে।
তার আগে রহমত শাহকেও (৪০ বলে ৪৫) হাত খুলে খেলার সুযোগ করে দিয়েছেন অন্যপ্রান্তে ভরসা হয়ে থাকা শহীদি। চতুর্থ উইকেটে ৬৩ বলে ৭১ রানের জুটি শহীদি-রহমতের, যা ইনিংসে গতি বাড়ানোর পাশাপাশি আফগান ইনিংসে পরের ওভারগুলোতে আক্রমণের ভিত গড়ে দিয়েছে। কিন্তু উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড অনে ধরা পড়লেন রহমত।
এরপর নবী-শহীদির অসাধারণ সে জুটি। পঞ্চম উইকেটে ৮০ রান এল মাত্র ৪৭ বলে, তার ৬৫ রানই নবীর। ২৭তম ওভারে দলকে ২০১ রানে রেখে নবী ফিরে গেলেন তিকসানার বলে ক্যাচ দিয়ে। তখন সব চাপ শহীদির ওপর। তাঁকেই টিকে থাকতে হবে, আবার আরেকটু আগ্রাসীও হতে হবে। শহীদি সে চেষ্টা করেছেন। তাঁকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন করিম জানাতও।
জানাত নেমেই পেটাতে থাকেন, ১২ বলে ২২ রানও করে ফেলেন। ৩১ ওভারে আফগানদের রান হয়ে যায় ২৩৪। কিন্তু এর পরের ওভারে ভেল্লালাগের জোড়া ধাক্কায় কিছুটা পথ হারিয়ে ফেলে আফগানিস্তান। প্রথম বলে জানাত ফিরলেন, চার বল পর ভেল্লালাগে দিলেন আরও বড় ধাক্কা – ফেরালেন শহীদিকে! মনে হছিল, আফগানিস্তান বুঝি সেখানেই পথ হারাবে!
কিন্তু আফগানরা তো হাল ছাড়ার পাত্র নন! নজিবুল্লাহ জাদরান ও রশিদ খান সেখান থেকেই চেষ্টা করে গেলেন! জাদরান ১৫ বলে করেছেন ২৩ রান, রশিদ তো শেষ পর্যন্ত অপরাজিতই থেকে গেলেন ১৬ বলে ২৭ রান করে।
৩৬তম ওভারের প্রথম তিন বলে একটি করে চার-ছ্ক্কা মেরে চতুর্থ বলে দলকে ২৭৬ রানে রেখে আউট হলেন জাদরান, আফগানিস্তানের তখন দরকার ৯ বলে ১৬ রান। সে সমীকরণ মেলানোর দায়িত্ব তখন রশিদের কাঁধে। স্ট্রাইকে থাকা মুজিব পরের দুই বলে কোনো রান নেননি। মাঝে একটা ওয়াইড হওয়ায় ওভার শেষে আফগানদের সমীকরণ – ৭ বলে দরকার ১৫ রান।
ভেল্লালাগের করা পরের ওভারে তৃতীয় বলে এক চার মারলেন রশিদ, পরের চার বলে দরকার ১১ রান। কিন্তু মুজিবকে স্ট্রাইকে দিতে ভরসা পাচ্ছিলেন না রশিদ, যা করার সেই ওভারেই করতে হতো। রশিদ শেষ দুই বলে আরও চার মারলেন। ৩৭ ওভার শেষে আফগানিস্তান ২৮৯/৮!
অর্থাৎ – সুপার ফোরে যেতে ১ বলে ৩ রান দরকার। কিন্তু ঝামেলা হলো, রশিদ তখন নন স্ট্রাইকে। দায়িত্বটা পড়ল মুজিবের কাঁধে। ধনাঞ্জয়ার বলে মুজিব মেরেছিলেন উড়িয়ে, কিন্তু লং অনে ক্যাচ!
এরপর ওই নাটক। আফগানিস্তান এত কাছে এসেও বাদ পড়ে গেছে বিপর্যস্ত। টিভিতে ধারাভাষ্যকার বলছিলেন, আফগানিস্তান এত কাছে এসে যাওয়ায় পরের তিন বলে ৬ রান নিতে পারলে তারাই যাবে শেষ চারে। কারণ, সে ক্ষেত্রে রানরেটে এগিয়ে যাবে তারা। কিন্তু হতাশায় ন্যুয়ে পড়া আফগান ড্রেসিংরুমে যেন সে খবর নেই। ক্রিজে দুই ব্যাটসম্যানের কাছে সে খবর গেছে বলে অন্তত খেলা দেখে মনে হলো না।
ওভারের দ্বিতীয় বলে ফুলটসেও সোজা ব্যাটে ঠেকিয়ে গেলেন শেষ ব্যাটসম্যান ফারুকি, অথচ সিঙ্গেল নিতে পারলে, রশিদ স্ট্রাইকে যেতে পারলে পরের দুই বলে পাঁচ রান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পরের বলেও ডট। তখন সমীকরণ, ওভারের চতুর্থ বলটাতে ফারুকি ছক্কা মারতে পারলেও আফগানিস্তানের রান হবে ২৯৫, সে ক্ষেত্রে আফগানিস্তান যাবে পরের রাউন্ডে। কিন্তু ফারুকি এলবিডাব্লিউ হয়ে গেলেন। ম্যাচই জিতে গেল শ্রীলঙ্কা। শেষ চারেও গেল শ্রীলঙ্কা। আফগানিস্তান হৃদয় জিতেও ভাঙা হৃদয়ে ফিরল বাড়ি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

এক-তৃতীয়াংশ ইহুদি-আমেরিকান কিশোর হামাসের প্রতি সহানুভূতিশীল

দখিনের সময় ডেস্ক: এক-তৃতীয়াংশের বেশি আমেরিকান-ইহুদি কিশোর (১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী) 'আমি হামাসের সাথে সহানুভূতিসম্পন্ন'- এমন বক্তব্যের সাথে একমত। ইসরাইলের একটি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে...

প্রতিদিন কলা খাওয়ার উপকার

দখিনের সময় ডেস্ক: প্রতিদিন কলা খেলে মেলে অনেক উপকার। কলায় থাকে প্রয়োজনীয় অনেক ভিটামিন। যে কারণে চিকিৎসকেরা নিয়মিত কলা খাওয়ার পরামর্শ দেন। প্রতিদিন অন্তত দুটি...

মোহিনীর প্রেমের এআর রহমানের বিচ্ছেদ, যা বলছেন পুত্র

দখিনের সময় ডেস্ক: ব্যক্তিজীবন নিয়ে সংবাদের শিরোনামে এআর রহমান। সায়রা বানুর সঙ্গে দীর্ঘ ২৯ বছরের দাম্পত্যের অবসান। বুধবার রাতে রহমানের স্ত্রী সায়রার আইনজীবী এই খবর...

স্মার্টফোনে ইন্টারনেট চলে যাচ্ছে? জেনে নিন গতি বাড়ানোর কৌশল!

দখিনের সময় ডেস্ক: অনেকেই মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় হঠাৎ করেই দেখেন, নেটওয়ার্ক চলে গেছে। আশেপাশের অন্যরা নির্বিঘ্নে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারলেও আপনার ফোনেই সমস্যা...

Recent Comments