Home শীর্ষ খবর কেউটের লেজ মাফিয়াদের হাতে ধরা

কেউটের লেজ মাফিয়াদের হাতে ধরা

সরকারি উদ্যোগে কোনো কাজ অথবা অকাজের সূচনাকালে প্রস্তাবনায় কারণ ও উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হয়। এ ক্ষেত্রে অনেক সময় গোঁজামিল ও দুষ্টামি থাকে। এ বিষয়ে রসালো একটি বচনের মতো আছে। যেমন—সরকারি টাকা হজম করার জন্য একটি জলাধার নির্মাণের প্রস্তাব করা হলো। এর কারণ ও উদ্দেশ্যে বলা হলো, এলাকায় পানির আকাল চলছে। এ অবস্থায় একটি পুকুর খনন অতীব জরুরি। দ্রুত এ প্রস্তাব অনুমোদিত হলো। কিছুদিনের মধ্যেই আরেকটি প্রস্তাবনা পেশ করা হলো। এতে বলা হলো, এলাকায় খেলার কোনো মাঠ নেই। শিশু-কিশোররা মনমরা হয়ে যাচ্ছে। আর যুবসমাজ হয়ে পড়ছে মাদকাসক্ত। এ অবস্থায় মাঠ প্রয়োজন। তবে তা নেই। এ পরিস্থিতিতে উমুক স্থানের পরিত্যক্ত পুকুরটি ভরাট করে খেলার মাঠ নির্মাণ করা যেতে পারে। এ প্রস্তাবও পাস হলো।
দুটি উদ্যোগই মহান। কিন্তু তলিয়ে দেখলে জানা যাবে, আসলে পুকুরও খনন করা হয়নি, কোনো পুকুরও ভরাট করে খেলার মাঠ তৈরি হয়নি। সবকিছুই হয়েছে কাগজপত্রে এবং তা একই স্থান কেন্দ্র করেই। সরেজমিন গেলে অব্যবহৃত মাঠই পাওয়া যাবে। যেখানে কখনো পুকুর ছিল না। ছয় জেলায় আরও ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাবে অনেকটা এ ধরনের মতলবি গোঁজামিলের কারণ ও উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন ভোলা জেলার বিষয়ে ইউজিসি বলছে, ‘এ জেলায় বর্তমানে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই। এটি দেশের একমাত্র দ্বীপ জেলা। পাশের জেলার সঙ্গে দূরত্ব অনেক। তাই এখানে সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সুপারিশ করা হলো।’
এ ন্যারেটিভে দুষ্টামি নেই ধরে নিলেও এটি যে পুরোনো পুথি দেখে করা হয়েছে, তাতে কোনো সংশয় নেই। যেমন সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে ছাপা হয়েছিল, বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার পিতার নাম জিন্না পুঞ্জা! অবশ্য, পাঠ্যপুস্তকের এ কেলেঙ্কারি সেটি প্রথম হতে পারে, তবে একমাত্র নয়। নর্দমার নোংরা জলের মতো এটি চলমান ধারা। আর এ নিয়ে তো মহা কেলেঙ্কারি উন্মোচিত হয়েছে বছরখানেক আগে। যাতে বড় বড় অধ্যাপক ও মহাজ্ঞানী মহাজনের মুখোশ কিঞ্চিৎ উন্মোচিত হয়েছে। তবে শুধু কেঁচো দেখা গেছে। কেউটে সাপ থেকে গেছে গর্তেই। বলাবাহুল্য, এ কেউটের লেজ মাফিয়াদের হাতে ধরা। যাক সে ভিন্ন প্রসঙ্গ।
এ কথা সঠিক, ভোলা একসময় বিচ্ছিন্ন ছিল। বিকেল ৫টার পর ভোলা থেকে বের হওয়ার আর কোনো উপায় ছিল না। সে সময় উত্তাল নদী পেরিয়ে দিনের বেলাও ভোলায় যাতায়াতের একমাত্র নৌপথ ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু সেটি সুদূর না হলেও বেশ অতীতের বিষয়। আর সুদূর অতীতেও ভোলা এত দূরে ছিল না যে, সেখান থেকে কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েনি। জাতীয় নেতা তোফায়েল আহমেদ ভোলার অজপাড়াগাঁয়ের সন্তান। এরপরও তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন। শুধু তাই নয়, তিনি ডাকসুর ভিপিও হয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাসের অংশ। এই কৃতী সন্তানের হাইট বর্ণনা করার কোনো প্রয়োজন আছে? এ ভোলারই আরেক কৃতী সন্তান মোকাম্মেল হক সিএসপি পরীক্ষায় রেকর্ড সৃষ্টি করেছিলেন, যা আর কেউ ভাঙতে পারেনি। এর আগেই পাকিস্তান ভেঙে গেছে। এরকম ভোলার অনেক কৃতী সন্তান আছে, যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন সেই সুদূর থেকে। আর এখন তো বাড়ির পাশে আরশিনগরের মতো আছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। যেখানে উত্তরবঙ্গের ছেলেমেয়েরাও পড়াশোনা করে। অবশ্য এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মান নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। যদিও এ ধরনের লজ্জাজনক বাস্তবতার বাইরে নয় কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ই। এমনকি খোদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও নয়।
আলম রায়হান, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক (দৈনিক কাবেলায় প্রকাশিত, ১৯ অক্টোবর ২০২৩))

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

সুযোগ পেলে গলা চেপে ধরবে আ.লীগ: রিজভী

দখিনের সময় ডেস্ক: গণহত্যার জন্য বর্তমানে আওয়ামী লীগ ক্ষমা চাওয়ার কথা বললেও, সুযোগ পেলে আবারও তারা মানুষের গলা চেপে ধরবে। এমনটাই মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র...

পরীমণির প্রথম স্বামীর রহস্যজনক মৃত্যু, খুন না সড়ক দুর্ঘটনা?

দখিনের সময় ডেস্ক: সড়কে রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে পরীমণির প্রথম স্বামী ইসমাইল হোসেনের । প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, একি দুর্ঘটনা না কি খুন? প্রাথমিকভাবে বলা হচ্ছে, শুক্রবার...

এক-তৃতীয়াংশ ইহুদি-আমেরিকান কিশোর হামাসের প্রতি সহানুভূতিশীল

দখিনের সময় ডেস্ক: এক-তৃতীয়াংশের বেশি আমেরিকান-ইহুদি কিশোর (১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী) 'আমি হামাসের সাথে সহানুভূতিসম্পন্ন'- এমন বক্তব্যের সাথে একমত। ইসরাইলের একটি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে...

প্রতিদিন কলা খাওয়ার উপকার

দখিনের সময় ডেস্ক: প্রতিদিন কলা খেলে মেলে অনেক উপকার। কলায় থাকে প্রয়োজনীয় অনেক ভিটামিন। যে কারণে চিকিৎসকেরা নিয়মিত কলা খাওয়ার পরামর্শ দেন। প্রতিদিন অন্তত দুটি...

Recent Comments