Home শীর্ষ খবর হঠাৎ কেন আলোচনায় মাইনাস টু প্রসঙ্গ

হঠাৎ কেন আলোচনায় মাইনাস টু প্রসঙ্গ

দখিনের সময় ডেস্ক:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মামুন আল মোস্তফা বলছেন, সরকার কিংবা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেকে নির্বাচনকে কম গুরুত্ব দিয়ে সংস্কারের দিকে বেশী গুরুত্ব দেয়ার কারণেই বিএনপির মধ্যে কথিত ‘মাইনাস টু’ ফর্মুলার আলোচনা এসেছে বলে মনে হচ্ছে।
ক্ষমতা থেকে উৎখাত হওয়ার পর থেকে গত তিন মাস ধরে আওয়ামী লীগের কোন কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না। দলটির প্রধান শেখ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ বেশিরভাগ নেতাই বিভিন্ন দেশে পালিয়ে গেছেন বা লুকিয়ে রয়েছেন। এর মধ্যেই ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শেখ হাসিনাসহ দলটির অনেক নেতার বিরুদ্ধে এর মধ্যেই শতাধিক মামলা হয়েছে। সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ অনেক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মানবতা বিরোধী অপরাধে দলের প্রধান শেখ হাসিনার বিচারের প্রক্রিয়া চলছে।
গত মাসে শেষের দিকে আওয়ামী লীগকে ‘একটি ফ্যাসিস্ট দল’ বর্ণনা করে তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ”যদি আওয়ামী লীগ ফিরে আসে, তাহলে গণ–অভ্যুত্থান ও শহীদদের সঙ্গে প্রতারণা করা হবে। আমাদের জীবন থাকতে তা হতে দেওয়া হবে না।” ফলে কার্যত এখন বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে আওয়ামী লীগ ও দলটির সভানেত্রী শেখ হাসিনা বাইরে চলে গেছেন।
এখন বিএনপির মধ্যেও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে যে, তাদেরকেও রাজনীতির মাঠ থেকে বাইরে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা হতে পারে। বিএনপির একাধিক নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, সংসদ নির্বাচনের কার্যক্রম দ্রুতগতিতে শুরু না করে রাষ্ট্রপতি পরিবর্তনের চেষ্টা, সরকার ঘনিষ্ঠদের কিংস পার্টি গঠনের তৎপরতা, সংবিধান সংস্কার নিয়ে অতিমাত্রায় আগ্রহ এবং তারেক রহমানের দেশে ফেরার ক্ষেত্রে থাকা আইনি বাধা অপসারণে ধীরগতিসহ কিছু বিষয় নিয়ে দলটির নেতৃত্ব কিছুটা অসন্তুষ্ট। এছাড়া বিএনপিকে ইঙ্গিত করে সরকারের কিছু উপদেষ্টা ও সরকার ঘনিষ্ঠ ছাত্রনেতাদের কয়েকজনের বক্তব্যও দলটির নেতাকর্মীদের ক্ষুব্ধ করেছে। তাদের কেউ কেউ মনে করছেন ‘বিএনপিকে উপেক্ষা করার একটা’ ইঙ্গিত ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে।
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, তারা মনে করেন বাংলাদেশের বাস্তবতায় বিএনপি সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল এবং সে কারণে যা কিছু করার সেটা বিএনপিকে আস্থায় নিয়েই করতে হবে- এটাই বিএনপি মহাসচিব বোঝাতে চেয়েছেন।“কিন্তু কারও কারও মন্তব্য বা কোন কোন মহল এমন কিছুর আভাস দিচ্ছেন যে মনে হচ্ছে তারা বিএনপিকে উপেক্ষা করতে চাইছেন। মনে রাখতে হবে শেখ হাসিনা অনেক চেষ্টা করেও খালেদা জিয়াকে মাইনাস করতে পারেনি। সেখানে বড় দল হিসেবে এখনও বিএনপিকে উপেক্ষা করা যাবে না,” মি. মাহমুদ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন। কিন্তু খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে রাখা বা তারেক রহমানকে দেশে ফেরতে দেয়ার ক্ষেত্রে কোন সমস্যা তৈরি করা – এমন কোন বিষয় আছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এমন দুরভিসন্ধি কেউ পোষণ করতে পারেন। কিন্তু তাতে কোন লাভ হবে না। বরং আমরা পরিষ্কার করে বলে দিতে পারি বাংলাদেশে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে বাইপাস করে কিছু হবে না”।
প্রসঙ্গত, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার চলতি সপ্তাহেই চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কবে নাগাদ দেশে ফিরতে পারবেন তাও এখনো দলটি নিশ্চিত হতে পারেনি।
কিছু মামলা থেকে তিনি অব্যাহতি পেলেও সব আইনি বাধা অপসারণে প্রশাসনিক ধীরগতিতে দলের অনেকের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। এর মধ্যেই সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের কারও কারও বক্তৃতাও বিএনপিকে ইঙ্গিত করে দেয়া হয়েছে বলে মনে করছেন দলের নেতারা। আবার বিএনপির বিরোধিতা সত্ত্বেও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে সরিয়ে দেয়ার বিষয়ে ছাত্র সমন্বয়কদের কারও কারও বক্তৃতার ‘ভাষাও’ দলটির সিনিয়র নেতাদের ভালো লাগেনি।
এর মধ্যেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সারাদেশে কমিটি গঠনের যে প্রক্রিয়া শুরু করেছে তাকে ‘কিংস পার্টি’ গঠনের প্রক্রিয়া বলেই মনে করছেন বিএনপির অনেক নেতা। তাদের কারও কারও ধারণা সরকারি সমর্থন নিয়ে এ ধরনের দল হলে সেটি পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করে তুলবে।
“একটা ঘোলাটে অবস্থা কিন্তু দেখা যাচ্ছে। এর লক্ষ্য যদি হয় বিএনপি যেন ক্ষমতায় আসতে না পরে- সেটি নিশ্চিত করা –এমন অবাস্তব চিন্তা হবে দু:খজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত,” বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের একজন সদস্য বলছিলেন। যদিও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রধান সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন যে তারা রাজনীতি থেকে কাউকে বাদ দিতে চান না।“ আমরা সবাইকে নিয়ে রাজনীতি করতে চাই। বিএনপিকে বাদ দেয়ার তো প্রশ্নই নেই। সরকারও সবার সাথে কথা বলছে। সবার আগে আলোচনায় বিএনপিকেই ডাকা হচ্ছে। বরং সরকার বিএনপিকেই প্রাধান্য দিচ্ছে। এখন বিএনপি কেন এমন ভাবছে তা আমাদের জানা নেই,” বলছিলেন তিনি।
“২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেন সরকারও প্রথমে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছিলো। শেষ পর্যন্ত সেটি মাইনাস টু ফর্মুলায় রূপ নেয়ার অভিযোগ উঠেছিলো। এবার গণঅভ্যুত্থানে বড় একটি দল উৎখাত হয়ে গেছে। বিএনপি হয়তো ভাবছে সংস্কারের নামে নির্বাচন প্রলম্বিত করে বা কিংস পার্টির মাধ্যমে তাদের ক্ষমতায় আসা বিলম্বিত করার চেষ্টা হচ্ছে। আমার ধারণা এ কারণেই তারা মাইনাস টু ফর্মুলার বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি। তাছাড়া বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে সরকার কিংবা সরকার ঘনিষ্ঠ কারও কারও বক্তৃতাও দলটিকে উদ্বিগ্ন করতে পারে বলে মনে করেন মি. মোস্তফা।
খবর: বিবিসি বাংলা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

৭০ শতাংশ সঞ্চয়পত্র ধনীদের হাতে

দখিনের সময় ডেস্ক: নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের আর্থিক নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সঞ্চয়পত্রে উচ্চ সুদ দিচ্ছে সরকার। জনগণের করের টাকায় দেওয়া এই সুদের সিংহ ভাগই খাচ্ছেন...

সঞ্চয়পত্র থেকে তিন মাসে ৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার

দখিনের সময় ডেস্ক: চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার নিট ৮ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে যেখানে...

শুরু হয়েছে শুটকি মৌসুম, চলছে  মাছ ধরা ও শুকানোর কাজ

দখিনের সময় ডেস্ক: সুন্দরবনে শুটকি উৎপাদনের মৌসুম শুরু হয়েছে। সোমবার (৪ নভেম্বর) থেকে ১০ হাজার জেলে মাছ ধরা ও শুকানোর কাজে নেমে পড়েছেন। শুষ্ক মৌসুমে...

আট হাজার পিস ইয়াবাসহ উত্তরায় মাদক কারবারি আটক

দখিনের সময় ডেস্ক: প্রথম দিনেই রাজধানীর উত্তরা ৮ নম্বর সেক্টরের ঢাকা থেকে ময়মনসিংহগামী হাইওয়ে রাস্তার পূর্ব পাশে পলওয়েল কারনেশন শপিং কমপ্লেক্সের সামনে বিশেষ চেকপোস্ট চলাকালে...

Recent Comments