ইটের ভাটায় লোকদেখানো অভিযান, কর্তৃপক্ষ কী শীতের পাখি?

দখিনের সময় রিপোর্ট ॥

ডিসেম্বর মাস এলেই শুরু হয় অবৈধ ইটের ভাটা বিরোধী অভিযান। এই অভিযান কখনো চালায় জেলা প্রশাসন, আবার কখনো চালায় পরিবেশ অধিদফতর। জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতর যখন কথিত অভিযান চালায় তখন ইট পোড়ানো শেষ হয়ে যায়। এটি প্রতি বছরের দৃশ্যপট। প্রশ্ন হচ্ছে, ডিসেম্বর এলে কেন শুরু হয় কথিত এই অভিযান? তা হলে কর্তৃপক্ষ কী শীতের পাখি? এর আগে কর্তৃপক্ষ কী করে?

ইটের ভাটার কারনে প্রধানত নষ্ট হয় কৃষি জমি। এরপর নষ্ট হয় পরিবেশ। যার প্রভাব ভয়াবহ এবং সুদুর প্রসারী। ইট ভাটার কালো ধোঁয়া প্রাণ, প্রকৃতি ও পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ঘটাচ্ছে। প্রকাশ্যে ক্রমাগত বনের কাঠ পুড়লেও নিয়ন্ত্রন করছে না প্রশাসন। হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ ও জনজীবন। সরকারী আইন কানুনের তোয়াক্কা না করে ইট ভাটা মালিকরা তাদের বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক আইন মেনে ইটভাটা চালানোর কড়া নির্দেশ থাকলেও তা মানছেন না বেশিরভাগ মালিক। তবে এ ক্ষেত্রে অন্য রকম লেনদেন হবার বিষয়টি অনেক ক্ষেত্রেই ওপেস সিক্রেট। এদিকে প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করে। ইটভাটার মালিকরা অবৈধভাবে বছরের পর বছর চালিয়ে যেতে পারছেন তাদের ইট ভাটার অবৈধ ব্যবসা।

বেশির ভাগ ইটভাটারই  অনুমোদন নেই। ব্যক্তি মালিকানা, সরকারী সম্পত্তি এবং সরকারের ১নং খাস খতিয়ানে এ সকল ইট ভাটা স্থাপিত হয়েছে। অনুমোদনহীন ইট ভাটাগুলো আইনের তোয়াক্কা না করে বসত বাড়ি এলাকায়, কৃষি জমিতেই গড়ে উঠা এ সকল ভাটা। কয়লার পরিবর্তে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। বসানো হয়েছে অবৈধ করাত কল। যা থেকে সরকারী চোরাই কাঠ/গাছ যাচ্ছে ইট ভাটায়। তবে এ বিষয়ে বন বিভাগের প্রতিরোধের কোন ব্যবস্থা দৃশ্যমান নয় কোথাও। রাস্তার ধারে আইনের তোয়াক্কা না করে দিন রাত অবৈধ ইটভাটা চললেও ভাটাগুলোর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা।

ইটের ভাটার কারণে নানান মুখি ক্ষতি সম্পর্কে কারোরই কোন দ্বিমত নেই। এ বিষয়ে বহু বছর ধরে বিভিন্ন মহল থেকে সতর্ক করা হচ্ছে। কিন্তু এ ব্যাপারে কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। কেবল শীত এলে লোক দেখানো অভিযান চালানো হয়। শীত এলে সুদূর সাইব্রেরিয়া থেকে যেমন শীতের পাখি আমাদের দেশে আসে, তেমনই ইটেরভাটা বিরোধী অভিযান দেখা যায় জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। অভিজ্ঞ মহলের মতে এ অভিযান প্রায় ক্ষেত্রেই লোক দেখানো। কেবল তাই নয়। এই অভিযানকে পূজি করে কাড়িকাড়ি টাকাও কামিয়ে নিচ্ছে অসৎ কর্মকর্তা কর্মচারীদের একটি চক্র।

উল্লেখ্য, ইট পোড়ানোর আগে অনেকগুলো ধাপ পেরিয়ে আসে। যা করা হয় প্রকাশ্যে। এ জন্য মাটি কাটা থেকে শুরু করে কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে ইটের সাইজ করার পর শুকানো হয়। এর পর পোড়ানোর জন্য সাজানো হয়। দীর্ঘ সময় ধরে করা এ কাজ গোপনে করার কোন উপায় নেই। কিন্তু শুরুতে প্রশাসন কুম্ভকর্নের মতো ঘুমে থাকে। জেগে ওঠে শীত এলে। যখন ইট পোড়ানো শেষ হয়ে যায়। যে ইট ধ্বংস করার আর কোন উপায় থাকে না।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, অবৈধ ইটের ভাটা বিরোধী প্রশাসনের কথিত অভিযানে আসলে লাভবান হয় এক শ্রেণীর অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বড় মালিকদের সিন্ডিকেট। প্রশাসন অভিযান চালালে বড় মালিকদের সিন্ডেকেট ইটের দাম বৃদ্ধির একটি অজুহাত পেয়ে যায়। যার খেসারত দিতে হয় চূড়ান্ত বিচারে ভোক্তাকেই। এদিকে কাজের কাজ কিছুই হয় না। অভিজ্ঞ মহল মনে করেন, অবৈধ ইটের ভাটা বিরোধী কার্যকর অভিযান চালাতে হলে তা করতে হবে ইটের জন্য মাটি কাটার শুরু থেকেই। তা না হলে, কেবল ইঁদুর বিড়াল খেলা চলবে; কাজের কাজ কিছুই হবে না। এদিকে অপর একটি সূত্র বলছে, ইটের বিকল্প ব্যবস্থা না করে ইটের ভাটা বিরোধী অভিযান সফল করা সম্ভব নয়।