মোঃ সাকিব রায়হান বাপ্পি
আজ সোমবার, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা প্রক্রিয়ার প্রথম প্রাথমিক আবেদন জমা দেয়ার কার্যক্রমের ২য় দিনে দেশের গুচ্ছ আওতাভুক্ত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের ভিড়, যার ব্যতিক্রম ছিল না বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়েও। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ভর্তিইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের সাথে ছিলেন তাদের অবিভাবকরাও। ২য় দিন হিসেবে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ভিড় থাকায় দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে সকলকেই।
যখনই নতুন কিছু আমাদের সামনে আসে তখন সাময়িক সময়ের জন্য তার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে আমাদের সমস্যা হওয়াটাই স্বাভাবিক। ঠিক তারই একটি উদাহরণ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা প্রক্রিয়া। ২০২১ সালে (২০২০-২১ শিক্ষার্বষে) প্রথম বারের মতো ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই গুচ্ছ প্রক্রিয়ায় ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয় এবং পরবর্তী বছরে আরো ২ টি বিশ্ববিদ্যালয় যুক্ত হয়। যার মূল উদ্দেশ্য ছিল ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি দূর করা। যার ফল স্বরূপ ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা ফর্ম পূরণের ও বিভিন্ন স্থানে গিয়ে পরীক্ষা দেয়ার খরচ থেকে যেমন মুক্তি পেয়েছে তেমন যাতায়াত ও থাকার সমস্যা থেকেও মুক্তি পেয়েছে।
আমরা যদি পূর্বের ভর্তি পরীক্ষার কথা ভেবে দেখি তাহলে দেখা যাবে, ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা আবেদনযোগ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদন করতে, সেখানে গিয়ে পরীক্ষা দিতে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের ও তাদের পরিবারকে ভালো পরিমাণের একটি অর্থ খরচ করতে হতো আবার থাকা, খাওয়ার সমস্যাতো ছিলই। গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা প্রক্রিয়ার ফলে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেয়েছে।
একই মুদ্রার কিন্তু দুটো পিট রয়েছে। গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা প্রক্রিয়া যেমন সুবিধা এনে দিয়েছে ঠিক তেমনি কমিয়ে দিয়েছে চান্স পাওয়ার সুযোগও। পূর্বে যতগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করা হতো ততগুলোই পরীক্ষা দিয়ে চান্স পাওয়ার সম্ভবনাও ছিল। কিন্তু এখন একটি পরীক্ষা দিয়ে যেমন ২২ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো একটিতে পড়ার সম্ভবনা রয়েছে আবার কোনোটিতে চান্স না পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। একটি পরীক্ষায় ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনাই বন্ধ করে দিতে পারে একজন পরীক্ষার্থীর উচ্চ শিক্ষা লাভের পথকে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের একজন শিক্ষার্থীর কাছে পূর্বের ভর্তি প্রক্রিয়া ও গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাওয়ায় তিনি জানান, আগের ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে অর্থ খরচ, যাতায়ত ও থাকার সমস্যা থাকলেও তারা অনেক কিছু শিখতে পেরেছিল এবং পেয়েছিল একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়ে চান্স পাওয়ার সুযোগ যা গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ায় পাওয়া সম্ভব নয়। এতে বর্তমানের ভর্তি-ইচ্ছুকরা যেমন সুবিধা পাচ্ছে ঠিক তেমনিই ঝুঁকিও থাকছেই।
বিভিন্ন নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লোকবল কম হওয়ায় ভর্তি কার্যক্রমে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। এছাড়া, প্রাথমিক প্রক্রিয়া, মাইগ্রেশন, বিভাগ পরিবর্তন, বিশ্ববিদ্যালয় পরিবর্তন, ভর্তি বাতিলের মতো বিভিন্ন কার্যক্রমে যাতায়াত, অর্থ খরচ এবং তথ্যের অভাবে ভোগান্তিতে পড়তে হয় ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের।
ভর্তি হতে আসা একজন শিক্ষার্থীর অবিভাবক জানান, ভর্তি কার্যক্রম এখন আগের তুলনায় ভোগান্তিমুক্ত হয়েছে এবং এই সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের জন্য ভালো। ভর্তি সংক্রান্ত তথ্যের প্রাপ্যতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যদি কেউ ইন্টারনেটের ব্যবহার করতে পারে তাহলে ভর্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য পাওয়া তার জন্য সহজ। গুচ্ছের ওয়েবসাইট, সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েবসাইট ও বিভিন্ন ভর্তি সহায়তাকারী ফেসবুক গ্রুপ থেকে সহজেই তথ্যগুলো পাওয়া যায়।
ভর্তি হতে আসা একজন শিক্ষার্থী জানান, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা প্রক্রিয়া তাদের জন্য সময়োপযোগী পদক্ষেপ। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লোকবল সংকটের কারণে ভর্তি কার্যক্রমে কিছুটা ভোগান্তি হলেও দীর্ঘমেয়াদি সুবিধা পাবে বলে তিনি আশা করেন।