Home সারাদেশ উজানের দেড় শ কি. মি. জুড়ে ছড়িয়েছে লবণাক্ততা

উজানের দেড় শ কি. মি. জুড়ে ছড়িয়েছে লবণাক্ততা

দখিনের সময় ডেক্স:

সম্প্রতি বরিশাল অঞ্চলে যে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব হয়েছে এর পেছনে পানির লবণাক্ততাকেও দায়ী করছেন জনস্বাস্থ্য গবেষকেরা। অনাবৃষ্টি, তীব্র তাপপ্রবাহ ও নদ-নদীতে অস্বাভাবিক লবণাক্ততার প্রভাবে পাল্টে যাচ্ছে পুরো দক্ষিণ উপকূলের পানি, মাটি ও পরিবেশের গুণগত চরিত্র।

কীর্তনখোলা নদীটি বরিশালের শায়েস্তাবাদ থেকে ঝালকাঠির নলছিটি পর্যন্ত ২১ কিলোমিটার দীর্ঘ। নলছিটিতে গিয়ে এটি বিষখালীতে মিশে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। বঙ্গোপসাগর থেকে এই নদীর দূরত্ব ১৩০ কিলোমিটার। কীর্তনখোলা এ অঞ্চলের স্বাদু পানির এক সুরক্ষিত আঁধার। গত ফেব্রুয়ারিতে এই নদীর পানির তড়িৎ পরিবাহিতা বা ইলেকট্রিক্যাল কনডাক্টিভিটি (ইসি) ছিল প্রতি সেন্টিমিটারে ৩০০ থেকে ৪০০ মাইক্রো সিমেন্স পর্যন্ত। কিন্তু মার্চে নাটকীয়ভাবে এই মান বেড়ে হয় প্রতি সেন্টিমিটারে ১ হাজার ৩৬২ মাইক্রোসিমেন্স।

বরিশাল আঞ্চলিক মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপাত্ত ঘেঁটে এসব তথ্য পাওয়া গেল। এই সংস্থাগুলো এ অঞ্চলের নদ-নদীর পানির মান নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে।

মৃত্তিকা ও কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তড়িৎ পরিবাহিতা বা ইসি পানির লবণাক্ততা পরিমাপের একটা মাপকাঠি। পানিতে লবণাক্ততা সহনীয় মাত্রা হচ্ছে প্রতি সেন্টিমিটারে ৭৫০ মাইক্রো সিমেন্স। বরিশালের নদীগুলোর পানি সহনীয় মাত্রার অনেক বেশি পরিমাণে লবণাক্ত। বরিশালসহ দক্ষিণ উপকূলের নদীগুলোতে উজানের প্রায় ১৫০ কিলোমিটারের বেশি জুড়ে এই লবণাক্ততা ছড়িয়ে পড়েছে। এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে কৃষি, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যে। সম্প্রতি বরিশাল অঞ্চলে যে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব হয়েছে, এর পেছনে পানির লবণাক্ততাকেও দায়ী করছেন জনস্বাস্থ্য গবেষকেরা।

লবণাক্ততার মাত্রা এতটা উজানে চলে আসার বিষয়টি আমাদের জন্য অশনিসংকেত। এখনই তা অনুসন্ধান করা উচিত। খরা, তাপমাত্রার পাশাপাশি উজানে পানি প্রবাহ হ্রাস হওয়ার পেছনে এর ভূমিকা আছে।

কীর্তনখোলার মতো বরগুনার বিষখালী অংশে এপ্রিলে লবণাক্ততার পরিমাণ ছিল প্রতি সেন্টিমিটারে ২ হাজার ৮৪ মাইক্রোসিমেন্স। একই সময়ে পটুয়াখালীর লোহালিয়া নদীতে লবণাক্ততা ছিল প্রতি সেন্টিমিটারে ৩ হাজার ৭১ মাইক্রো সিমেন্স। পায়রা নদীর আমতলী অংশে লবণাক্ততা ১২ হাজার ৮০ সিমেন্স, বলেশ্বর নদের পাথরঘাটার চরদুয়ানি অংশে পাওয়া যায় ১৪ হাজার ৪০ সিমেন্স।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অসংখ্য নদী-খালবেষ্টিত হওয়ায় অন্যান্য উপকূলীয় এলাকা থেকে বরিশালের মাটি, পানি ও আবহাওয়ার বৈশিষ্ট্য আলাদা। শুষ্ক মৌসুমেও উজান থেকে মিষ্টি পানির যথেষ্ট প্রবাহ থাকায় সাগরের লবণ পানি এসব নদীর অভ্যন্তরে ঢুকতে পারত না। তবে গত কয়েক বছর লবণাক্ততা, অনাবৃষ্টি ও তাপপ্রবাহের ফলে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করে। কিন্তু এবার হঠাৎ করেই এই পরিবর্তন আরও ত্বরান্বিত হয়। সুরক্ষিত এলাকায় অস্বাভাবিক লবণাক্ততা ছড়িয়ে তা উজানের দিকে ধেয়ে এসেছে। এর মধ্যেই দেড় শ কিলোমিটারের বেশি এলাকায় লবণাক্ততা ছড়িয়েছে। এ নিয়ে নিবিড় অনুসন্ধান প্রয়োজন বলে মনে করছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

টিকটকে নিরাপদ রাখবে যে ১০ ফিচার

দখিনের সময় ডেস্ক: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে টিকটক। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাথে যৌথভাবে কাজ শুরু করেছে টিকটক। যেখানে ‘ফিডস’ নেটওয়ার্কের...

প্রতিদিন খেজুর খাবেন যে কারণে

দখিনের সময় ডেস্ক: আপনার কি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য সুস্বাদু কোনো খাবার প্রয়োজন এবং সেইসঙ্গে অতিরিক্ত ওজন কমাতে চাইছেন? এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হতে পারে খেজুর।...

পরীমণি প্রথম স্বামীর পরদিন মারাগেলো প্রথম পরিচালক

দখিনের সময় ডেস্ক: লাইফ সাপোর্টে থেকেই না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন ঢাকাই সিনেমার আলোচিত নায়িকা পরীমণির প্রথম সিনেমা ‘ভালোবাসা সীমাহীন’-এর পরিচালক শাহ আলম মণ্ডল।  গুলশানের...

বাউফলে ইউএনও’র বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল

নয়ন সিকদার, বাউফল প্রতিনিধি পটুয়াখালীর বাউফলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ বশির গাজীর বিরুদ্ধে অনিয়ম,দুনীতি ও অপসারনের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বৈশোম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। গতকাল...

Recent Comments