Home অন্যান্য অপরাধ ও দূর্নীতি গা শিউরে ওঠা নির্যাতনের শিকার কিশোরী আমেনা খাতুন

গা শিউরে ওঠা নির্যাতনের শিকার কিশোরী আমেনা খাতুন

দখিনের সময় ডেস্ক:

মায়ের বান্ধবীর বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করতে গিয়ে এক বছর ধরে নির্যাতনের শিকার আমেনা খাতুন (১১)। সারা শরীরে গরম খুন্তির ছ্যাঁকার দাগ।  প্লায়ার্স দিয়ে মাথা ফুটো করে দিয়েছে, চুল টেনে ছিঁড়েছে। ক্ষত শুকিয়ে কালশিটে পড়ে গেছে। আমেনা এখন যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অমানুষিক নির্যাতনের বর্ণনা শুনে গা শিউরে উঠছে।

যশোর সদর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের নূর ইসলাম ও আকলিমা খাতুনের মেয়ে আমেনা। দুই বছর বয়সে তার বাবা মারা যায়। নানা মারা যান জন্মের আগেই। সাত বছর বয়সে নানি জোহরা খাতুন আকলিমাকে আবার বিয়ে দিয়ে দেন। ভিক্ষা করে নানি জোহরা খাতুনই লালন পালন করতেন আমেনাকে।

হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আমেনা জানায়, শ্যামলী আন্টি তাকে ঢাকার মহাখালীতে সাততলা সরকারি কোয়ার্টারে নিয়ে যান। সেখানে শ্যামলী আন্টি, তার স্বামী বাদল সিকদার ও আন্টির শাশুড়ি লিলি থাকেন। আন্টির শাশুড়ি সরকারি হাসপাতালের নার্স। ওই বাসায় নিয়ে যাওয়ার পর দু’মাস সে ভালো ছিল। এরপর থেকেই শুরু হয় নির্যাতন। বাড়ির কাজের একটু এদিক-ওদিক হলেই তাকে বেধড়ক মারপিট করতেন শ্যামলী ও বাদল।

আমেনা আরও বলে, তাকে দিয়ে বাসা বাড়ির সব ধরনের কাজ করানো হতো। এর আগে আমেনা কোথাও কাজ করেনি বা শেখেনি। শুরু হলো রুটি বানানো দিয়ে। রুটির পরিমাণ কম বলে আমেনাকে মারপিট করা হতো। হাত থেকে পিরিচ পড়ে গেল কেন; আবার মার। সারা গায়ে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা, হাত ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে হাত মচকে দিয়েছে, প্লায়ার্স দিয়ে মাথার চুল টেনে টেনে উঠিয়ে দিয়েছে, গলায় এবং মাথায় আঘাত করেছে। দুই পায়ে পিটিয়ে ভেঙেছে রুটি বানানো বেলন। শ্যামলীর স্বামী আমেনার পায়ের ওপরে দাঁড়িয়ে যন্ত্রণা দিয়েছে। আমেনার মুখে টেপ লাগিয়ে হত্যাচেষ্টাও করেছে।

অত্যাচার নির্যাতনের এসব কিছুই জানতে পারেনি আমেনার মা ও নানি। আকলিমা খাতুন জানান, ফোন করলেই বলতো আমেনা ভালো আছে। ফোনে লাউড দিয়ে কথা বলাতো। তারা কিছুই জানতে পারেনি। তিনি আরও জানান, গত বছর করোনার আগে তার ছোট বেলার বান্ধবী শ্যামলী বৈরাগী তাকে অনুরোধ করে আমেনাকে তার সঙ্গে দেওয়ার জন্য। শ্যামলীর দুটি বাচ্চা। ঢাকার বাসায় থেকে আমেনা তাদের দেখাশোনা করবে। আমেনার থাকা-খাওয়া মানুষ করার দায়িত্ব তার। সরল বিশ্বাসে বান্ধবীর হাতে মেয়েকে তুলে দিয়েছিলেন আকলিমা।

জোহরা খাতুন জানান, এক মাস আগে তিনি আমেনাকে দেখতে ঢাকায় যায়। কিন্তু বাদল তাকে বাড়ি নেয়নি। তার কাকা তাকে মিরপুরের বাসায় নিয়ে গেছে। তাকে বলেছে, শ্যামলী বাদল বরিশালে বেড়াতে গেছে। আমেনাকে সঙ্গে নিয়ে গেছে। যশোরে ফিরে জোহরা খাতুন ফোন করে আমেনার জন্য কান্নাকাটি করে। একপর্যায়ে এক সপ্তাহ আগে আমেনাকে নিয়ে আসার জন্য তার মা আকলিমাকে ফোন করেন শ্যামলী। এরপর গত ২৩ মে তার নানি ঢাকায় গিয়ে আমেনাকে নিয়ে আসেন। এরপর ২৫ মে তাকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

অশ্রুসিক্ত আকলিমা বলেন, মেয়েটাকে শ্যামলীর কাছে দিয়েছিলাম ভালো থাকবে বলে। কিন্তু তার এই অবস্থা করবে ভাবতেই পারিনি। আমি আমার মেয়ে নির্যাতনের বিচার চাই। হাসপাতালে আমেনাকে চিকিৎসা দেওয়া যশোর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. অজয় কুমার সরকার জানান, মেয়েটির শরীরে অসংখ্যা পোড়া বা ছ্যাঁকার দাগ ও নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। অনেক ক্ষত শুকিয়ে গেছে। অনেক দিন ধরেই এই ক্ষতগুলো হয়েছে। তাকে যথাযথ চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেশনাল এমবিএ প্রোগ্রাম চালু

কাজী হাফিজ: বর্তমান বিশ্বে মাস্টার্স অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন (এমবিএ) প্রোগ্রামকে ব্যবসা এবং ব্যবস্থাপনার সর্বোচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন কোর্স হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের চাহিদার কথা...

গাড়িতে আসার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিলেন রনোভাই

প্রায় দুই দশক আগে এসটিভি ইউএস নামে একটি টেলিভিশন আমেরিকা থেকে সম্প্রচারিত হতো। কিন্তু কার্যক্রম পরিচালিত হতো বাংলাদেশ থেকে। এতে মুখোমুখি নামে একটি টকশো...

মাছ ধরার সময় শ্বাসনালিতে বাইন মাছ

দখিনের সময় ডেস্ক: ঝুঁকিপূর্ণ দেখে তিন ঘণ্টার চেষ্টায় শ্বাসনালি কেটে বাইন মাছটি বের করা হয়। এরপর রোগী সুস্থ হলে ৭-৮ দিন পর তার শ্বাসনালিতে বসানো...

অধ্যক্ষের রুমে ঢুকে শিক্ষক পেটানো সেই ছাত্রলীগ নেতা বহিষ্কার

দখিনের সময় ডেস্ক: কলেজে অধ্যক্ষের রুমে ঢুকে শিক্ষক পেটানো ছাত্রলীগ নেতাকে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। শিক্ষককে পেটানো বহিষ্কৃত এ ছাত্রলীগ নেতা হলেন মো. সাফাতুন নুর...

Recent Comments